মেমারির আমাদপুরের কালী প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র।
গ্রামে দুর্গাপুজোর তেমন চল নেই। কিন্তু কালীপুজো হয় মাজিগ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই। মেমারির বর্ধিষ্ণু গ্রাম আমাদপুরেও কালীর চার বোনকে ঘিরে মেতে ওঠে পুরো গ্রাম। মশাল জেলে আজও বিসর্জনের রেওয়াজ রয়েছে ওই গ্রামে।
বড়মা, মেজমা, সেজমা, ছোটমা। আমাদপুরে চারশো বছরেরও বেশি সময় ধরে চার বোন পূজিত হন। এই চার বোন ছাড়াও গোটা গ্রামে রয়েছে কমবেশি একশোটি কালী প্রতিমা। সিদ্ধেশ্বরী, বুড়িমা, ডাকাত কালী, ক্ষ্যাপা মা, আনন্দময়ী মা, ভিন্ন ভিন্ন নাম দেবীর। আমাদপুরের বাসিন্দারা জানান, আগে গ্রামের পাশ দিয়েই প্রবাহিত হত বেহুলা নদী। বর্তমানে তা মজে গিয়ে খালের আকার নিয়েছে। সেই সময়ে নদীকে ঘিরে বাণিজ্য হত। দস্যুদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারাতেন অনেক বণিক। তাঁরা আশ্রয় নিতেন বেহুলা নদীর ধারে আমাদপুরের শ্মশানকালীর কাছে। এক সাধু থাকতেন শ্মশানে কালীসাধনা করতেন। দস্যুদের হাত থেকে বাঁচতে দেবীই ভরসা ছিলেন বণিকদের। সেই শুরু কালীপুজোর।
মঙ্গলকোটের মাজিগ্রামে আষাঢ় মাসের নবমী তিথিতে শাকম্ভরী দেবীর পুজো হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কয়েকশো বছর আগে গ্রামের সর্দারপাড়ার বাসিন্দারা স্থানীয় পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে পাথরের একটি মূর্তি কুড়িয়ে পান। সেই মূর্তি ‘শাকম্ভরী’ নামে পরিচিত হয়। গ্রামের প্রবীণদের মতে, “মূর্তিটি আসলে দুর্গার। শাকম্ভরী পুজোর কিছু দিনের মধ্যেই হয় দুর্গাপুজো। তাই পরপর দু’বার পুজো না করে কালীপুজো চালু হয়।” গ্রামে শারদোৎসব হয় না। কয়েকটি বাড়িতে ঘটে পুজো হলেও মূর্তি আসে না। বাসিন্দারা জানান, দুর্গাপুজো হয় না বলে, কালী পুজোটাই সাড়ম্বরে পালন করেন তাঁরা। আত্মীয়ের বাড়িতে তত্ত্ব পাঠানো থেকে বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়, সবই পালন হয় কালীপুজোয়।
বিসর্জনের আগে শাকম্ভরীতলায় প্রতিটি প্রতিমা রেখে আতসবাজি প্রদর্শনের রীতি রয়েছে মাজিগ্রামে। আমাদপুরেও বিসর্জনের সময়ে বড়, মেজ, সেজ আর ছোটমাকে কাঁধে নিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ করা হয় সারা রাত। গোটা গ্রাম ঘোরানোর পরে ভোরের দিকে বিসর্জন হয়। শোভাযাত্রাও হয় সব প্রতিমা নিয়ে। এই দুই গ্রামে কালীপুজোয় যেন শারদোৎসব।