আবাস যোজনার তালিকা প্রকাশ নিয়ে সংশয়। — ফাইল চিত্র।
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার (দ্বিতীয় পর্যায় অর্থাৎ আবাস প্লাস) অন্তর্গত বাড়ি প্রাপকদের নামের তালিকা চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েতরাজ মন্ত্রক। পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, চূড়ান্ত তালিকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তৈরি করে উপভোক্তাদের ‘জিও ট্যাগিং’-এর কাজ শুরুর পরিকল্পনা আছে। কিন্তু বুধবার পর্যন্ত একাধিক ব্লকের গ্রামসভা থেকে নামের তালিকা পাঠানো হয়নি। সে কাজ সম্পূর্ণ না হলে, সময়ে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের মধ্যে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) প্রশান্তরাজ শুক্ল অবশ্য বলেন, “সার্ভের কাজ জোর কদমে চলছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ হবে।”
আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে রাজ্যের নানা প্রান্তে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে। বাদ পড়েনি পশ্চিম বর্ধমান জেলাও। বিরোধীরা কাজে গড়িমসির অভিযোগ তুলেছেন। সরব হয়েছে একাংশ তৃণমূল নেতৃত্বও। মঙ্গলবার সালানপুর ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূলের এসটি সেল। বাড়ি প্রাপকদের তালিকায় এক জনও গরিব আদিবাসী মানুষের নাম নেই বলে অভিযোগ তৃণমূলের সালানপুর এসটি সেলের ব্লক সভাপতি জয়েস হাঁসদার।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম বর্ধমানের আটটি ব্লকের ৬২টি পঞ্চায়েতে প্রায় ৩৭ হাজার আবাস তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। যে উপভোক্তাদের নামের তালিকা এখনও পর্যন্ত তৈরি হয়েছে, সেগুলি সমীক্ষার (সার্ভে) কাজ শুরু হয়েছে। চূড়ান্ত তালিকা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তৈরি করে উপভোক্তাদের ‘জিও ট্যাগিং’-এর কাজ শুরুর পরিকল্পনা আছে। জেলা পরিষদের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত একাধিক ব্লকের গ্রামসভা থেকে প্রাপকদের নামের তালিকা তৈরি করে পাঠানো হয়নি। সে কাজ সম্পূর্ণ না হলে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে জিও ট্যাগিং-এর কাজ শুরু করা সম্ভব হবে কি না, সংশয় তৈরি হয়েছে। সংশয় রয়েছে, চলতি অর্থবর্ষে আবাস যোজনার জন্য বরাদ্দ টাকা খরচ করা যাবে কি না, তা নিয়েও। সম্প্রতি জেলায় এসে কেন্দ্রের পঞ্চায়েত প্রতিমন্ত্রী কপিল মোরেশ্বর পাটিল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের সার্ভের কাজ দ্রুত শেষ করে, বরাদ্দ অর্থ খরচ করার পরামর্শ দিয়েছেন। জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুভদ্রা বাউড়ির দাবি, সার্ভের কাজ দ্রুত গতিতেই হচ্ছে। বরাদ্দ টাকাও চলতি অর্থবর্ষে খরচ করা হবে।
এ দিকে, গড়িমসির পেছনে রাজনৈতিক স্বার্থ দেখছেন বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সভাপতি দিলীপ দে’র দাবি, “তৃণমূলশাসিত পঞ্চায়েতগুলি এই প্রকল্প সার্থক হোক, তা চাইছে না। কারণ, গ্রামের মানুষ মাথায় ছাদ পেলে তো ওদের দিকে ঝুঁকবেন না।” সিপিএমের রাজ্য নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “শেষবেলায় তড়িঘড়ি করে নামের তালিকা তৈরির নামে ওরা বেনিয়ম করার সুযোগ পাবে।” যদিও বিরোধীদের এমন মন্তব্যকে ‘মনগড়া’ বলে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের ভারপ্রাপ্ত জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায়।