Ukraine

Ukraine crisis: বাইরে গুলি চলছে, বাঙ্কারে রয়েছে ওরা

‘‘খাবারের জন্য কাড়াকাড়ি শুরু হয়েছে। বোমা পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। হস্টেলের মেসে খেতে যেতেও পারছে না তারা। কারণ, বাইরে গুলি চলছে।’’

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৯:০৫
Share:

ইউক্রেন থেকে ফোনে ভিডিয়ো কলে মেয়ে রুমকি ও ঝুমকির সঙ্গে কথা বলছেন তাঁর মা। ছবি: বিকাশ মশান

ডাক্তারি পড়তে ইউক্রেনে গিয়েছেন পশ্চিম বর্ধমান জেলারও বহু ছাত্রছাত্রী। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সব পরিবারের একটাই আর্জি, তাদের ঘরের ছেলে-মেয়েদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুক সরকার।

Advertisement

দুর্গাপুরের রাতুড়িয়ার ধীরেন গঙ্গোপাধ্যায় ও সুনন্দা’র যমজ দুই মেয়ে রুমকি ও ঝুমকি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ইউক্রেনের রাজধানী কিভের থেকে প্রায় পাঁচশো কিলোমিটার দূরের খারকিভ শহরের ‘খারকিভ ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি’তে পড়তে গিয়েছেন তাঁরা। মা সুনন্দা স্বাস্থ্যকর্মী। বাবা ধীরেন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও গ্যাস সংস্থার অস্থায়ী কর্মী। বাবা-মা জানান, ছোট থেকে রুমকি ও ঝুমকি’র স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। ২০২১-এর ৮ ডিসেম্বর খারকিভ গিয়েছেন দুই বোন। কলেজের হস্টেলে থাকেন। ধীরেন বলেন, “শুক্রবার সকালে শেষ বার মেয়েদের সঙ্গে কথা হয় কিছু ক্ষণের জন্য। মেয়েরা জানায়, জল নেই। খাবারের জন্য কাড়াকাড়ি শুরু হয়েছে। বোমা পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। হস্টেলের মেসে খেতে যেতেও পারছে না তারা। কারণ, বাইরে গুলি চলছে। মাটির তলায় বাঙ্কারে রয়েছে ওরা। বার বার ওরা দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার কথা বলছে!”

ধীরেন জানান, পুলিশ তাঁদের বাড়িতে এসে মেয়েদের যাবতীয় তথ্য নিয়ে গিয়েছে। মা সুনন্দার আবেদন, “যে ভাবেই হোক, মেয়েদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুক সরকার। দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুমোতে পারছি না আমরা!”

Advertisement

ইউক্রেনের রাজধানী থেকে প্রায় ছ’শো কিলোমিটার দূরের ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক শহরের ‘ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি’তে পড়তে গিয়েছেন দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের এ-জ়োনের টেগর অ্যাভিনিউয়ের নেহা খান। এমবিবিএসের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি। ২০১৯ সালে তিনি সেখানে ডাক্তারি পড়তে যান। নেহার বাবা ফিরোজ জানিয়েছেন, দিনে বার বার ভিডিয়ো কলে কথা হচ্ছে মেয়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, “নেহা যেখানে থাকে সেখান থেকে আট থেকে দশ কিলোমিটার দূরে বোমা পড়ছে বলছে। দু’তিন দিনের বেশি খাবার ও জল নেই ওর কাছে! কী ভাবে নিরাপদে মেয়ে ফিরে আসবে, তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছি!”

ফিরোজ জানান, মেয়ে তাঁদের জানিয়েছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই আবাসনের নীচে বাঙ্কার করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে সাইরেন বাজিয়ে সবাইকে ভিতরে যেতে বলা হয়। নেহার মা নৌশভা পারভিন ও বোন নিশা জানান, বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ছিল। শুক্রবার বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে। মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ কমছে। এতে দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে তাঁদের।

ওই একই কলেজে পড়েন তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী, বেনাচিতির জিন্নত আলম। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মেয়ের ইউক্রেনে আটকে পড়ার খবর শুনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাঁর মা নাজ পারভিন। বাবা সাদার আলাম জানান, কলেজের ক্লাস সোমবার পর্যন্ত বন্ধ বলে জানানো হয়েছে। ফোনে নিয়মিত কথা হচ্ছে মেয়ের সঙ্গে। শহরে জল সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিষেবাও যে কোনও মুহূর্তে বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। টাকা পাঠিয়েছেন। কিন্তু এটিএমে লম্বা লাইন। টাকা তুলতে পারছে না মেয়ে। খাবার মজুত আছে দু’-তিন দিনের। এর পরে কী হবে, তা জানা নেই বলে জানিয়েছেন মেয়ে।

ডিএসপি টাউনশিপের এ-জ়োনের রাহুলপ্রসাদ রায় খারকিভের ‘ভিএন কারাজিন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’তে মেডিক্যাল সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ইউক্রেনে যান ২০১৯-এ কলেজের হস্টেলে থাকেন। তিনি ফোনে জানান, বৃহস্পতিবার যুদ্ধ শুরুর পরে, সোমবার পর্যন্ত পঠন-পাঠন বন্ধের নোটিস দেওয়া হয়। দেশে ফেরার সব রাস্তা বন্ধ। স্থানীয় বিমানবন্দরও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির লোকজনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে পর্যাপ্ত পরিমাণে রেশন সামগ্রী জোগাড় করে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। ওই কলেজেরই মেডিক্যাল সায়েন্সের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া বেনাচিতির শুভজিৎ সিংহ। তাঁর আশা, “ভারত সরকার দ্রুত আমাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবে।”

এ ছাড়াও, কাঁকসার পানাগড় বাজারের দুই মেডিক্যাল ছাত্রীও আটকে পড়েছেন ইউক্রেনে। ২০১৮-এ ইউক্রেন গিয়েছেন শিখা পাল এবং ২০২১-এ গিয়েছেন জ্যোতি সিংহ। দুই পরিবারের তরফেই দ্রুত তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার আর্জি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া, দুর্গাপুরের আরও অনেকে ইউক্রেনে আটকে আছেন বলে জানা গিয়েছে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, পশ্চিম বর্ধমান জেলার কেউ ইউক্রেনে আটকে থাকলে, তাঁদের দেশে ফেরাতে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অভিজিৎ সেভলে জানিয়েছেন, এ বিষয়ে প্রশাসনের তরফে প্রতিনিয়ত রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করা হচ্ছে। একটি ‘কন্ট্রোল রুম’ খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল-রুমের দু’টি নম্বর ৭৭১৯৩৭৭৪৩৩ ও ৮৬৫৩৯৯৯৯০২-এ ফোন করে ইউক্রেনে আটকে থাকাদের নাম, নম্বর, সেখানকার ঠিকানা ও পেশা সংক্রান্ত বিশদ বিবরণ জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান অভিজিৎ সেভলে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement