একই মন্দিরে দুই প্রতিমা। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
মন্দির একটিই। কিন্তু, সেখানে হাতখানেক দূরত্বে শোভা পাচ্ছে দুর্গার দু’টি প্রতিমা! তা দেখে কাটোয়া পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সার্কাস ময়দানে নাগরিক কল্যাণ সর্বজনীনের পুজোয় ‘কোন্দলের’ আঁচ করছেন এলাকাবাসীর একাংশ। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পুজোর অনুমতি পাওয়ার জন্য দু’পক্ষই আর্জি জানিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুজোর ‘অধিকার’ নিয়ে যাঁদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব, তাঁদের এক দিকে রয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর শ্যামল ঠাকুর। আর অন্য গোষ্ঠীতে রয়েছেন শঙ্করীপ্রসাদ ঘোষ, পরিতোষ পাল নামে কয়েক জন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৯ অগস্ট শ্যামলবাবু পুজোর জন্য এলাকায় তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কয়েকজনকে নিয়ে মন্দির চত্বরে সভা করেন। এমনকি, তাঁরা পুজোর জন্য মহকুমা প্রশাসনের কাছে অনুমতিও চান। ইতিমধ্যে অনুমতি চান শঙ্করীপ্রসাদবাবু, পরিতোষবাবুরাও। দিন পনেরো আগে শ্যামলবাবুর নেতৃত্বে একচালার প্রতিমা মন্দিরে আনা হয়। তা বেদিতে বসিয়ে মন্দিরের দরজায় বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই ঘটনার পরের দিনই অন্য গোষ্ঠীর লোকজন তালা ভেঙে বেদি থেকে হাতখানেক দূরে দুর্গার অন্য একটি প্রতিমা রাখেন।
কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে এই ‘দ্বন্দ্বের’ সূত্রপাত? শ্যামলবাবুর ঘনিষ্ঠেরা জানান, পুজো কমিটি ২০০৮-এ প্রথমে আড়াই কাঠা জায়গা কিনে পরে কিছু দিন ধরে মন্দির তৈরি করে। জমির দলিলে কমিটির সম্পাদক হিসেবে শ্যামলবাবুর নাম রয়েছে। তার পরে থেকেই ওই পুজোর অন্যতম ‘মাথা’ হিসেবে দেখা গিয়েছে শ্যামলবাবুকে, দাবি এলাকাবাসীর একাংশের। কিন্তু পুজোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের অভিযোগ, কারও মত না নিয়ে অতীতে পুজোয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের আনতেন শ্যামলবাবু। এর ‘প্রতিবাদ’ হিসেবেই তৈরি হয় ওই পুজোকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয় অন্য একটি কমিটি।
এই পরিস্থিতিতে শ্যামলবাবু বলেন, ‘‘পুজো কমিটির সম্পাদক আমি। মন্দিরে আমরাই পুজো করব। প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়েছি। দেখা যাক কী হয়। রাজনৈতিক ইন্ধনে পুজো ঘিরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।’’ তবে সেই ‘ইন্ধন’ কারা বা কে দিচ্ছেন, সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কাউন্সিলর। এ দিকে, শঙ্করীপ্রসাদবাবু বলেন, ‘‘এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই। এ বছর পুজো কমিটি আমাকেই সম্পাদক করেছে। পুজোর জন্য প্রশাসনের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। ওদের বলব, আপনাদের প্রতিমা সরিয়ে নিন। মন্দিরে একটিই প্রতিমা পুজো হবে।’’
বিষয়টি নিয়ে মহকুমাশাসক (কাটোয়া) সৌমেন পাল বলেন, ‘‘ওই পুজোর অনুমতি চেয়ে দু’টি আবেদন মিলেছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সব দিক খতিয়ে দেখে কোনও এক পক্ষকে অনুমতি দেওয়া হবে। কোনও অশান্তি মানা হবে না।’’