মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। — ফাইল চিত্র।
চলতি আর্থিক বছরে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা পূর্ব বর্ধমানে আসেনি। কিন্তু শেষ দু’টি আর্থিক বছরের টাকায় এখনও উন্নয়নের কাজ শেষ করতে পারেনি পঞ্চায়েত। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত মিলিয়ে জেলার খাতে ১৫২ কোটি টাকারও বেশি পড়ে রয়েছে বলে রিপোর্টে উঠে এসেছে। সম্প্রতি কাটোয়ায় একটি দলীয় সভায় বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে উন্নয়নের টাকা কেন পড়ে থাকবে, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। যদিও মন্ত্রীর দাবি মানেনি জেলা পরিষদ।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ৩ নভেম্বরের একটি রিপোর্টে পঞ্চদশ অর্থ কমিশন থেকে গত দু’টি আর্থিক বছরে উন্নয়নের খাতে মেলা টাকা ও খরচের হাল উঠে এসেছে। সেপ্টেম্বরে দ্রুত টাকা খরচ নিয়ে একদম নিচু স্তর পর্যন্ত বৈঠক করেছিল জেলা প্রশাসন। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ১২টি পঞ্চায়েতকে সতর্ক করে জেলা প্রশাসন। ওই বৈঠকের রিপোর্ট অনুযায়ী, পানীয় জল সরবরাহে ছ’টি পঞ্চায়েত, জনস্বাস্থ্যে চারটি পঞ্চায়েত ও রাস্তা তৈরিতে দু’টি পঞ্চায়েত কোনও টাকা খরচ করতে পারেনি। প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, বৈঠকের পরে পঞ্চায়েতগুলি নড়ে বসলেও কাজের অগ্রগতি হয়নি।
তৃণমূল সূত্রে খবর, কাটোয়ায় ওই বৈঠকে মন্ত্রী পঞ্চায়েত ভোটের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘সব টাকা খরচ হয়নি। মমতাদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) উন্নয়নের টাকা ফেলে রাখা যাবে না বলেছেন। প্রধানেরা যদি বিষয়টি দেখেন, ভাল হয়। পঞ্চায়েত নির্বাচন তো করতে হবে!’’ তাঁর ক্ষোভ, ‘‘২০২০-২১ সালে পঞ্চায়েতগুলি ১৬২.৭৩ কোটি টাকা, পঞ্চায়েত সমিতি ২৯.৬২ কোটি ও ৪০ কোটি টাকা পেয়েছে। যে টাকা পড়ে রয়েছে বলে দেখানো হচ্ছে, তার সবটা ঠিক নয়। কিছু টাকা হয়তো পড়ে রয়েছে। কিন্তু তিন স্তরে কোথাও কেন টাকা পড়ে থাকবে?’’ বৈঠক চলাকালীনই মন্ত্রীর বক্তব্যের বিরোধিতা করেন জেলা পরিষদের তৃণমূল কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম। জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া বলেন, ‘‘মন্ত্রীর কাছে সম্ভবত সঠিক তথ্য ছিল না। সব টাকারই কাজ চলছে।’’
প্রশাসনের রিপোর্ট অনুযায়ী, খরচের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে কালনা ২ ব্লকের বাদলা, কাটোয়া ২ ব্লকের সিঙ্গি, জামালপুরের জারগ্রাম, বর্ধমান ১ ব্লকের বেলকাশ পঞ্চায়েত। সিঙ্গির প্রধান অমলেন্দুর দের দাবি, ‘‘৭০ লক্ষ টাকার কাজ শুরু হওয়ার মুখে। বালি-পাথরের সমস্যার জন্য কাজ শুরু হতে দেরি হয়েছে।’’ জারগ্রামে ৩২ লক্ষ টাকার একটি কাজ নিয়ে মামলা চলায় সেখানে এক কোটি টাকার বেশি পড়ে রয়েছে। বেলকাশের প্রধান জাহানারা খাতুনের দাবি, ‘‘নির্মাণ সহায়কের সমস্যার জন্য দরপত্র ডাকার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়েছিল।’’ তবে রায়না ১ ব্লকের নতু পঞ্চায়েত প্রায় একশো শতাংশ টাকা খরচ করে ফেলেছে বলে জানা গিয়েছে। খরচের দিকে এগিয়ে রয়েছে কাটোয়া ১ ব্লকের খাজুরডিহি, গলসি ২ ব্লকের আদ্রা, মেমারি ২ ব্লকের সাতগাছিয়া ১, রায়না ২ ব্লকের আরুই ও মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রাম পঞ্চায়েত।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘টাকা খরচ করতে পারছে না। তার দায় চাপাতে অন্যের দিকে বল ঠেলছে তৃণমূল।’’ বিজেপি নেতা সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘টাকা থাকলে খরচ করতে পারে না, খরচ করলে কাটমানি খায়! এটাই তৃণমূল।’’