প্রথাগত পদ্ধতিতে চাষের এই পন্থাকেই বদলানোর সুপারিশ। —ফাইল চিত্র
বৃষ্টি ঘাটতি, ভূগর্ভস্থ জলস্তর কমে গেলেও মাটির তলার জল নিয়েই চাষিরা চাষাবাদ করছেন। জেলার ১১টি ব্লক ইতিমধ্যেই ‘আংশিক বিপজ্জনক’ (‘সেমিক্রিটিক্যাল’) বলে চিহ্নিত হয়েছে। ফলে এখনই ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারে লাগাম না পরানো গেলে অদূর ভবিষ্যতে জেলায় বড়সড় বিপদ হতে পারে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা। এই পরিস্থিতিতে কৃষি-কর্তারা জেলার চাষিদের কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন।
কৃষি দফতরের কর্তাদের মতে, চাষে জলের ব্যবহার কমাতে গেলে পুরনো আমলের চাষ-পদ্ধতি ছাড়তে হবে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের পরামর্শ মূলত দু’টি।
পরামর্শ এক: বৃষ্টি ভাল না হলে (এ বারেই যা হয়েছে) আমন চাষের জন্য ‘জিরো টিলেজ’ পদ্ধতি চাষিরা ব্যবহার করলে জল অত্যন্ত কম লাগবে, ফলন ভাল হবে, পাশাপাশি খরচও কমবে। এ ছাড়া ‘শ্রী’ পদ্ধতিতে চাষ করলেও সুফল মিলবে। কিন্তু এই জোড়া পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে প্রচার চালানো হলেও চাষিদের মধ্যে তা জনপ্রিয় হয়নি বলে দাবি কৃষিকর্তাদের একাংশের। এক কর্তার কথায়, ‘‘ড্রাম-সিডার পদ্ধতিতে ধান চাষও জনপ্রিয় হয়নি।’’
পরামর্শ দুই: কৃষি আধিকারিকদের দাবি, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে চাষে ব্যবহার করতে হবে। মহকুমা (কালনা) কৃষি আধিকারিক আশিস বারুই বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে মজে যাওয়া জলাশয়গুলি পরিষ্কার করে সেগুলির গভীরতা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন জলাশয় তৈরি করতে হবে। মূল কথা, মাটির উপরিভাগের জলকে বেশি পরিমাণ ব্যবহার করতে হবে।’’
কিন্তু কৃষি দফতরের কর্তারা এ সব বললেও পদ্ধতিগুলির কোনওটাই তেমন জনপ্রিয় হয়নি চাষিদের মধ্যে, দাবি আধিকারিকদেরই। ফলে, কালনা, কেতুগ্রাম, কাটোয়া, মেমারি-সহ জেলার নানা প্রান্তে বেশির ভাগ চাষি বীজতলা ও মূল জমি তৈরির জন্য ভূগর্ভস্থ জল তুলছেন। কিন্তু কেন জনপ্রিয় হল না? কালনার ধান চাষি বিবেক মণ্ডলের কথায়, ‘‘পূর্বপুরুষের শেখানো চাষের পদ্ধতি এত সহজে তো বদলানো যায় না। তাই কৃষি দফতর নতুন পদ্ধতি নিয়ে প্রচার চালালেও ঝুঁকি থাকে।’’
পাশাপাশি, গতানুগতিক পদ্ধতির চাষে জলের ‘অপচয়’ বন্ধেরও আর্জি জানাচ্ছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। এ ক্ষেত্রে তাঁদের যুঝতে হচ্ছে চাষিদের কিছু ‘পুরনো ধারণার’ সঙ্গেও। যেমন, বহু ধান চাষির বিশ্বাস, ধানের জমিতে সবসময় গাছের বেশির ভাগ অংশ ডুবে থাকা দরকার। অথচ, কৃষি দফতরের কর্তাদের দাবি, এর অর্ধেক জলও দরকার হয় না। তা ছাড়া, যে সব এলাকায় জলের উৎস দূরে, সেখান থেকে জমিতে কাঁচা নালার মাধ্যমে জল আনতে গিয়েও জল নষ্ট হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কালনা মহকুমার সহ কৃষি অধিকর্তা (বিষয়বস্তু) পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘জলের অপচয় বন্ধে ‘বিন্দু সেচ’, ‘ফোয়ারা সেচ’ অত্যন্ত কার্যকরী। আনাজ-সহ বেশ কিছু চাষে এই দুই ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকরী। এর ফলে সেচ দেওয়ার পাশাপাশি জল কম লাগবে। গাছের গোড়ায় পৌঁছবে জল।’’
তবে এ সব পদ্ধতি জনপ্রিয় করতে হলে বিশেষ ভাবে প্রচার চালাতে হবে চাষিদের মধ্যে, তা-ও স্বীকার করছেন কৃষি দফতরের কর্তারা।