তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ আপকার গার্ডেনে। বুধবার। ছবি: পাপন চৌধুরী
সকালের আড় সবে ভেঙেছে শহর আসানসোলের। আচমকা, শহর জুড়ে তৈরি হল চাঞ্চল্য। উপলক্ষ, মন্ত্রী তথা আসানসোল উত্তরের বিধায়ক মলয় ঘটকের বাড়িতে সিবিআই-তল্লাশি। দলের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ, রাজনৈতিক চাপান-উতোরে শুধু শহর নয়, গোটা জেলাই বুধবার দিনভর রইল সরগরম।
আসানসোলের ওয়েস্ট আপকার গার্ডেনে মলয়ের দু’টি বাড়ি এবং আপার চেলিডাঙায় তাঁর পৈতৃক বাড়িতে শুরু হয় তল্লাশি। বাড়িগুলির সব দরজা-জানলা বন্ধ করে শুরু হয় তল্লাশি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা তিনটি বাড়িতেই সাধারণের প্রবেশ নির্দেশ করে দেন।
ইতিমধ্যে বাসভবনে নিয়ে আসা হয় এক চাবিওয়ালাকে। পরে, মন্ত্রীর স্ত্রী সুদেষ্ণা দাবি করেন, তিনিই ওই চাবিওয়ালাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। কারণ, দু’টি আলমারির তিনটি তালা খোলা যাচ্ছিল না। কিছুক্ষণ পরে ঘরের ভিতর থেকে তালা ভাঙার শব্দ পাওয়া যায়। ঘণ্টাখানেক পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে মহম্মদ হাসিম নামে ওই চাবিওয়ালা দাবি করেন, “আলমারিতে শুধুই রয়েছে আইনের মোটা-মোটা বই।”
রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়তে থাকে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে। মলয়ের বাড়ির পাশের রাস্তায় কয়েকশো তৃণমূল সদস্য, সমর্থকের ভিড় জমান। আসানসোল পুরসভার ৮১, ৫৬ ও ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের তিন তৃণমূল কাউন্সিলর যথাক্রমে সোনা গুপ্ত, শ্রাবণী বিশ্বাস, মৌসুমী বসু নামে তিন জন, অন্যতম ‘ডেপুটি মেয়র’ ওয়াসিমুল হক, তৃণমূল নেতা মহম্মদ আফরোজ, রাজু ওহলুওয়ালিয়ারা সেখানে চলে আসেন। নানা সময়ে, তাঁরা মলয়ের বাড়িতে ঢুকতে গেলেও, তাতে বাধা দেন জওয়ানেরা।
এর পরেই শুরু হয় বিক্ষোভ। বিক্ষোভ এক সময় জিটি রোডে চলে আসে। যানবাহন চলাচলও কিছুটা ব্যাহত হয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে, বেলা সাড়ে ১১টায় বিক্ষোভ থামে। পাশাপাশি, দুর্গাপুরে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে, রানিগঞ্জে ২ নম্বর জাতীয় সড়কেও কিছুক্ষণ অবরোধ করে যথাক্রমে তৃণমূল ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। জাতীয় সড়কে ব্যাপক যানজট হয়।
চেলিডাঙায় মলয় ঘটকের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে জওয়ানেরা। বুধবার। ছবি: পাপন চৌধুরী
তবে মলয়ের পৈতৃক বাড়ির আশপাশে খুব একটা ভিড় ছিল না। পরে, মন্ত্রীর বাসভবনে তল্লাশি শেষ হওয়ার পরে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা চলে আসেন সেখানে। শুরু হয় বিক্ষোভ। বাড়িতে ছিলেন মলয়ের ভাই তথা আসানসোলের অন্যতম ‘ডেপুটি মেয়র’ অভিজিৎ ঘটক। একটা সময় পরে, সিবিআই-এর অনুরোধে অভিজিৎ বাইরে বেরিয়ে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করেন। বিকেল সাড়ে ৪টেয় সিবিআই আধিকারিকেরা সেখান থেকে বেরোনোর সময়ে, তাঁদের উদ্দেশে কটূক্তি করা হয় বলে অভিযোগ।
এ দিকে, পুরো বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। বিজেপির আসানসোল জেলা সভাপতি দিলীপ দে বলেন, “সিবিআই নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্য জুড়ে অভিযান চালাচ্ছে। তৃণমূল নেতৃত্ব জনসাধারণের সহানুভূতি পেতে বিজেপিকে দোষারোপ করছেন। কিন্তু মানুষ সব জানেন।” বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালও বলেন, “একে-একে দুর্নীতি ফাঁস হবে। সিবিআই নিয়ম মেনেই কাজ করছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের প্রতিক্রিয়া, “আমরা বরাবর বলে এসেছি, আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক বেআইনি কাজের সঙ্গে যুক্ত।” যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল নেতা তথা আইনজীবী দেবব্রত সাঁইয়ের প্রতিক্রিয়া, “আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের বিরুদ্ধে কোনও বেআইনি কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ নেই। তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সিবিআই অভিযান হচ্ছে।”