ফাইল চিত্র।
এক বৃদ্ধা ও তাঁর ছেলেকে পিটিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের শম্ভুপুর গ্রামের এক তৃণমূল নেতা ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। বৃদ্ধা লাখি বেগম ও তাঁর ছেলে শেখ সাইদুল মোল্লার অভিযোগ, ওই তৃণমূল নেতা সন্ত্রাস চালাচ্ছেন গ্রামে। তাঁদের শাস্তির দাবিতে জামালপুর থানার দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। যদিও অভিযোগ মানেননি ওই নেতা। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েই পুলিশ মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। অভিযুক্তদের খোঁজ করা হচ্ছে।’’ অভিযোগ মানেননি ওই তৃণমূল নেতা।
জামালপুর ব্লকের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম শম্ভুপুর ও চক্ষণজাদি। শম্ভুপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ সাইদুল মোল্লা পুলিশকে অভিযোগে জানিয়েছেন, মাংস ও আনাজ বিক্রির কাজ করেন তিনি। বেশ কয়েক বছর আগে, নিজের রোজগারে শম্ভুপুরে জমি কিনে বাড়ি করেছেন। বৃদ্ধা মা, সৎ-বাবা, স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে সেখানেই থাকেন তিনি। তাঁর দাবি, গত ১৬ জুলাই মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার পরে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তাঁর সৎ-বাবা। তাঁরা ভেবেছিলেন, রাগ কমলে ওই বৃদ্ধ বাড়ি ফিরে আসবেন। কিন্তু বৃদ্ধ দম্পতির ঝগড়ায় এলাকার তৃণমূল নেতা ও তাঁর দলবল জুড়ে যান বলে অভিযোগ।
সাইদুলের দাবি, ঘটনার পরের দিন সন্ধ্যায় পাশের চক্ষণজাদি গ্রামের তৃণমূল নেতা ফিরোজ শেখ ও জিয়ারুল মল্লিক দলবল নিয়ে তাঁদের বাড়িতে হাজির হন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর সৎ-বাবাও। সাইদুলের অভিযোগ, ‘‘ওঁরা বলেন, ‘আমাদের কথাই শেষ কথা এলাকায়’। এর পরেই শম্ভুপুরে থাকার অধিকার নেই বলে ফিরোজ, জিয়ারুল ও তাঁদের সঙ্গে থাকা পাঁচ জন আমাকে মারতে শুরু করেন। লাঠি, দা দিয়েও মারা হয়।’’ রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি পড়ে গেলে, বৃদ্ধা মা সাইদুলকে বাঁচাতে যান। ফিরোজ ও তাঁর দলবল তাঁকেও মারধর করেন বলে অভিযোগ। সাইদুল জানান, নেতাদের ভয়ে গ্রামের কেউ এগিয়ে আসেননি। কোনও রকমে পালিয়ে মাকে নিয়ে জামালপুর ব্লক হাসপাতালে পৌঁছন তিনি। পরে, জামালপুর থানায় অভিযোগ জানান। সাইদুলের দাবি, ‘‘আমাকে ও মাকে ফেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে ওরা। বাড়ি ফেরার সাহস পাচ্ছি না।’’ বর্তমানে রায়নায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে তাঁরা রয়েছেন।
এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, ফিরোজ তৃণমূলের কোনও পদে নেই। তাঁর স্ত্রী বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। সে সুবাদেই ‘বাড়বাড়ন্ত’ তাঁর। ফিরোজের যদিও দাবি, ‘‘ঘটনার কথা কিছুই জানি না। কেন আমার নামে এমন অভিযোগ করা হয়েছে, বুঝতেই পারছি না।’’
জামালপুরের বাসিন্দা, জেলা তৃণমূলের সম্পাদক প্রদীপ পাল বলেন, ‘‘ফিরোজ শেখ দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও নেতা নন। পঞ্চায়েত সদস্যও নন। দলের কয়েকজন মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কের সঙ্গে ছবি তুলে ফিরোজ নিজেকে বড় নেতা ভাবছেন। এটা ঠিক নয়। ওঁর সম্পর্কে আরও কথা আমাদের কানে এসেছে। সব দলের নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, কারও পারিবারিক অশান্তির বিচার করতে যাওয়া দলের কাজ নয়। দলের নির্দেশ না মেনে ফিরোজ যে ঘটনা ঘটিয়েছে, তার দায় তৃণমূলের নয়। পুলিশ, প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।’’