দীর্ঘদিন ধরেই কাটোয়া পুরসভায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, গোলমালের অভিযোগ উঠছিল। পুরসভার বৈঠকেও দেখা যেত না বেশির ভাগ কাউন্সিলরকে। বৃহস্পতিবার কলকাতার তৃণমূল ভবনে সেই সমস্যা মেটাতে ডেকে পাঠানো হয়েছিল কাটোয়ার সব কাউন্সিলর, পুরপ্রধান ও বিধায়ককে।
কাটোয়া বা পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল নেতারা মুখ খুলতে না চাইলেও রাজ্য স্তরের তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘কাটোয়া পুরসভা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গন্ডগোল চলছে। সব কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। দলের সঙ্গে আলোচনা করে খুব তাড়াতাড়ি একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” তবে সেই সিদ্ধান্তে পুরপ্রধান অমর রাম না কি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, কার দিকে পাল্লা ঝুঁকবে তার কোনও স্পষ্ট ইঙ্গিত দিতে চাননি ওই নেতা।
২০১৫ সালে অমর রামের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন কংগ্রেসের দখলে থাকা কাটোয়া পুরসভা গড়ে তৃণমূল। ওই বছরই পুজোর আগে সদলবলে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। শুরু হয় পুরসভার অন্দরে দ্বন্দ্ব। কাউন্সিলরদের মধ্যেও ভাগ হয়ে যায়। পুরপরিষেবা নিয়ে অভিযোগ ওঠে বারবার। এখনও পর্যন্ত উপ-পুরপ্রধানও নিযুক্ত করা যায়নি কাটোয়ায়। পুরসভা সূত্রের খবর, কয়েকমাস ধরে যে কোনও বৈঠকে দেখা যাচ্ছে না বিধায়ক অনুগামী ১৩-১৪ জন কাউন্সিলরকে। দলের উপরমহল থেকে নির্দেশ আসার পরেও তার বদল হয়নি। এ দিনের বৈঠকেও দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি ও বর্ধমান জেলার পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন, দলকে হেয় করে পুরবোর্ডের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকা যাবে না। তিন কাউন্সিলরকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে বলেও বৈঠক সূত্রের খবর।
দলের এক নেতার কথায়, “দলনেত্রী পুরসভার অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মানতে নারাজ। প্রয়োজনে দল ব্যবস্থাও নিতে পারে।” তাহলে কী দলের ‘সিদ্ধান্ত’ বা ‘ব্যবস্থা’ নেওয়ার কোপ পুরপ্রধানের ঘাড়েই পড়তে চলেছে? অমরবাবুর দাবি, “দলের একান্ত কর্মী হিসেবে আমি বৈঠক নিয়ে কোনও কথা বলব না। যা বলার নেতৃত্ব বলবেন।” বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবুও বলেন, “যা বলার জেলা সভাপতি ও রাজ্য নেতৃত্ব বলবেন।”
এ দিনের বৈঠকে ১৯ জন কাউন্সিলরের মধ্যে তিন জন গরহাজির ছিলেন। জানা গিয়েছে, বিধায়ককে প্রত্যেক কাউন্সিলরের সঙ্গে পৃথক ভাবে কথা বলে সমস্যা মেটানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব। বিধায়ক-ঘনিষ্ঠ এক কাউন্সিলর বলেন, “অরূপবাবু তৃণমূল ভবন থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় বিধায়ককে ডেকে ওই নির্দেশ দিয়ে যান।” জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের কথায়, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব করা যাবে না, এই নির্দেশের পাশাপাশি পুরপরিষেবা যাতে ব্যাহত না হয় তার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব।”