Accident

ক্ষতিপূরণ চেয়ে আসরে নামল সব পক্ষ

মঙ্গলবার ইসিএলের চিনাকুড়ি ১ নম্বর কোলিয়ারিতে ডুলি সংস্কারের কাজ করার সময়ে দুর্ঘটনায় পড়েন ৬ জন ঠিকা শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:২৩
Share:

ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিজেপি ও তৃণমূলের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

ইসিএল-এর চিনাকুড়ির কোলিয়ারিতে দুর্ঘটনায় মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবিতে বুধবার দিনভর তেতে রইল খনি চত্বর। ভোটের মুখে বিষয়টি নিয়ে সব রাজনৈতিক দলই ময়দানে নেমেছে। বিজেপি অবস্থান-বিক্ষোভে বসে। ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বচসায় জড়াল তৃণমূল। একই দাবি তুলে ক্ষোভ জানাল সিপিএম। এই ঘটনার জন্য পরস্পরকে দুষলও নানা রাজনৈতিক পক্ষ। বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ ইসিএল কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণের লিখিত প্রতিশ্রুতি দিলে বিক্ষোভ থামে। তৃণমূল বিধায়ক হরেরাম সিংহ মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করায় নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে বিজেপি।

Advertisement

মঙ্গলবার ইসিএলের চিনাকুড়ি ১ নম্বর কোলিয়ারিতে ডুলি সংস্কারের কাজ করার সময়ে দুর্ঘটনায় পড়েন ৬ জন ঠিকা শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়। এর পরেই মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবি তোলা হয় বিভিন্ন তরফে। বুধবার সকাল থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ-আন্দোলন। এ দিন সকলে খনি কার্যালয়ের গেট আটকে অবস্থানে বসেন কুলটির বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দার, দলের আসানসোল জেলা সভাপতি বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায়েরা। অজয়ের দাবি, ‘‘ইসিএল কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাচ্ছেন না। তাই এই অবস্থান।’’

এর মাঝে খনি কার্যালয়ে পৌঁছে যান কুলটির প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। তিনি খনির অধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে ক্ষতিপূরণের দাবি জানান। দ্রুত দাবি মেটানো না হলে এলাকার অন্য খনির কাজ বন্ধ করে আন্দোলনের হুমকিও দেওয়া হয়। উজ্জ্বলের দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় সংস্থা ইসিএল সাধারণ শ্রমিকের কথা ভাবছে না। দাবি পূরণ না হলে বিক্ষোভ চলবে।’’ এই পরিস্থিতির মধ্যে আসেন সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এই খনি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। যে কারণে এই দুর্ঘটনা। তাতে প্রমাণ হল, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছে না।’’

Advertisement

এ দিন বিকেলে সোদপুর এরিয়া কার্যালয়ের পার্সোনেল ম্যানেজার সপ্তর্ষি গোস্বামী বিক্ষোভকারী বিজেপি ও তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি দু’পক্ষের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। তিনি জানান, মৃতদের পরিবারকে এককালীন ১৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ও পারলৌকিক ক্রিয়ার জন্য ৪০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। মৃতদের নিকট এক পরিজনকে নিরাপদ জায়গায় ঠিকা শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করা হবে। এই আশ্বাসে বিজেপি রাজি হলেও বেঁকে বসে তৃণমূল। দলের নেতা উজ্জ্বল দাবি করেন, শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ বাবদ যে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হচ্ছে সেটি বিমা থেকে পাওয়া যাচ্ছে। তা শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা। এই টাকা ছাড়াও ঠিকা সংস্থাকে আলাদা ভাবে ৫ লক্ষ টাকা করে দিতে হবে। এর ব্যবস্থা ইসিএলকে করতে হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের তরফে তা মানা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। ফলে, ফের অচলবস্থা তৈরি হয়। এর পরে ঘটনাস্থলে আসেন জামুড়িয়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা তৃণমূলের কোলিয়ারি শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হরেরাম সিংহ। তিনি খনির আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকের পরে খনি কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি লিখিত ভাবে মৃতদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিক্ষোভও বন্ধ হয়।

এ দিন ঘটনাস্থলে হরেরাম সিংহ মৃতদের পরিবারকে এক লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি বাপ্পাদিত্যের দাবি, ‘‘ভোট ঘোষণার পরে এ ভাবে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে তৃণমূল। কমিশনে নালিশ জানাব।’’ হরেরামের পাল্টা দাবি, ‘‘দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো তৃণমূলের ধর্ম। মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করি না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement