আসানসোলে। নিজস্ব চিত্র
আন্দোলনের ঝাঁঝ ‘নেই’। মূল দলীয় কার্যালয়ে ভিড় নেই। বিষয়টি কাকতালীয় হলেও, অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারের পরে, শুক্রবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের আন্দোলনের চেহারা এবং তৃণমূলের মূল জেলা কার্যালয়টির ছবি দেখে এমনটাই মনে করছেন কেউ-কেউ। যদিও, তা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। পাশাপাশি, আগ বাড়িয়ে কর্মসূচি নয়, এই বার্তাও দলের অন্দরে দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শুক্রবার রাজ্য জুড়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছে তৃণমূল। সে মতো তৃণমূল ছাত্র পরিষদ শুক্রবার নিয়ামতপুর ও আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। সে সঙ্গে, যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি কৌশিক মণ্ডল বলেন, “শুক্রবার জেলার পাঁচটি জায়গায় অবস্থান-বিক্ষোভ হয়েছে।” কিন্তু দলের শক্তিশালী যুব-সংগঠন থাকা সত্ত্বেও জেলার মাত্র পাঁচটি জায়গায় কেন এই কর্মসূচি হল? এ প্রশ্নের সরাসরি কোনও উত্তর দেননি কৌশিক। তবে বলেন, “শনিবারও নানা জায়গায় কর্মসূচি হবে।” এ দিন একই বিষয়কে সামনে রেখে, পাণ্ডবেশ্বরে মিছিল করে তৃণমূল। ছিলেন, বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। পাশাপাশি, একই বিষয়ে, কাঁকসা, পানাগড় বাজারে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আইএনটিটিইউসি। ছিলেন সংগঠনের নেতা সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যেকেই ইডি ও সিবিআই-কে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার অভিযোগ তোলেন।
আসানসোলের বিএনআর-এ তৃণমূল ভবনটি হল জেলায় দলের কার্যালয়। অন্য দিন সেখানে গেলে, ভিড় নজরে পড়ে। এ দিন কার্যত খাঁ-খাঁ করছে গোটা চত্বর। অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারের জন্যই কি এমন হাল? প্রশ্ন করতেই কার্যালয়ে সাংগঠনিক আলোচনায় ব্যস্ত দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভিশিবদাসন বলেন, “তেমন কিছু নয়। ছাত্র-যুবরা আন্দোলন করছেন। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি হবে।” ঘটনাচক্রে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের পরে, জেলার কিছু জায়গায় আন্দোলনে নেমেছিলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। যদিও, জেলা নেতৃত্ব জানিয়েছিলেন, তাতে দলের অনুমোদন ছিল না। এ দিকে, তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগ বাড়িয়ে কোনও কর্মসূচি না নেওয়ার জন্য প্রতিটি ব্লকের নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জেলার কিছু জায়গায় বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন কেউ-কেউ। জেলা তৃণমূলের একটি সূত্রের পর্যবেক্ষণ: ওই সব বিক্ষোভে দলের ‘অনুগামী’ ও কর্মীদের কেউ-কেউ ছিলেন। তাঁদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সতর্কওকরা হচ্ছে।
তবে, এ দিনও তৃণমূলকে বিঁধতে ছাড়েনি বিরোধীরা। সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “অনুব্রত মণ্ডল তৃণমূলের দুর্নীতির একটি নিদর্শন মাত্র। গোটা দলটাই দুর্নীতিতে ভরা। আমরা বিষয়টি নিয়ে প্রচারও চালাব।” বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দিলীপ দে’র প্রতিক্রিয়া, “কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা নিরপেক্ষ তদন্ত করছে। তাই ভয় পেয়েছে তৃণমূল। সে জন্য ওদের আন্দোলনে জোর নেই।”তবে তৃণমূল বিধায়ক বিধান উপাধ্যায় বলেন, “দুর্নীতির সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। আমরা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের নির্দেশ অনুযায়ীপদক্ষেপ করব।”