শ্রীমন্ত ঘোষ, পৃথ্বীরাজ সিংহ ও রামসহায় মুখোপাধ্যায়।
স্কুলের উন্নয়ন, পড়ুয়াদের স্কুলে ফিরিয়ে আনা থেকে করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধির পাঠ— এই সব ক্ষেত্রেই অগ্রণী হয়ে রাজ্য সরকারের তরফে এ বার শিক্ষারত্ন পেতে চলেছেন পূর্ব বর্ধমানের তিন শিক্ষক। জেলা স্কুল পরিদর্শক শ্রীধর প্রামাণিক (মাধ্যমিক) বলেন, ‘‘ওই তিন জনের মধ্যে রয়েছেন কালনা মহারাজা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রীমন্ত ঘোষ। বাকি দু’জন হলেন কেতুগ্রাম ১ ব্লকের আরগন প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক পৃথ্বীরাজ সিংহ ও রায়নার মুসলিম প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসহায় মুখোপাধ্যায়।’’ তিন জনেই জানান, শিক্ষা দফতর থেকে সোমবার দুপুরে খবরটি জানানো হয়েছে তাঁদের।
৩২ বছর ধরে শিক্ষকতা করেছেন শ্রীমন্তবাবু। গত ন’বছর ধরে কালনা মহারাজা স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে রয়েছেন। বড়মিত্রপাড়ার এই বাসিন্দা শিক্ষকতা শুরু কালনা ১ ব্লকের মেদগাছি স্কুল থেকে। সেখান খেকে কৃষ্ণদেবপুর হাইস্কুলে সাড়ে আট বছর থাকার পরে, ২০১১ সালে আসেন বর্তমান স্কুলে। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী অসীমা ঘোষ। ছেলে ঋষভ কৃষি নিয়ে স্নাতকোত্তর করছেন। মেয়ে ঋত্বিকা বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি অনার্সের ছাত্রী। শ্রীমন্তবাবু বর্তমানে মেয়ের কাছে বেনারসে রয়েছেন। ফোনে বলেন, ‘‘এই পুরস্কার শুধু আমার নয়, স্কুলের সবার।’’
শ্রীমন্তবাবু যোগ দেওয়ার পরে কালনা মহারাজা হাইস্কুলে ১৫টি শ্রেণিকক্ষ, মাধ্যমিকে শেষ ক’বছর ১০০ শতাংশ পাশ, প্রতিটি ক্লাসের নিজস্ব গ্রন্থাগার, স্কুলছুট কমানোর সঙ্গে গরিব ছাত্রদের সাহায্যে বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে। পড়ুয়াদের সাংস্কৃতিক চর্চার জন্যেও এক প্রকার বিরল হয়ে যাওয়া ‘দেওয়াল পত্রিকা’র উপরে জোর দিয়েছেন শ্রীমন্তবাবু।
কেতুগ্রাম ১ ব্লকের প্রান্তিক গ্রাম আরগন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক পৃথ্বীরাজ সিংহ থাকেন বীরভূমের নানুরে। ১৯৯৯ সালে পূর্বস্থলীর লক্ষ্মীপুরের কাছে, সিঙাপুর প্রাথমিক স্কুলে যোগ দেন তিনি। ২০০৪ সাল থেকে আরগন স্কুলে রয়েছেন। ২০০৭-এর হন প্রধান শিক্ষক। ২০১৪ সাল থেকে নির্মল বিদ্যালয়, শিশুমিত্রের মতো শিক্ষা দফতরের একাধিক পুরস্কার পেয়েছে এই স্কুল। পড়াশোনা, শরীরচর্চার পাশাপাশি, পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়ে গ্রামে সামাজিক সচেতনতা প্রচার করেছেন শিক্ষকেরা। শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা যায়, করোনা নিয়েও ওই প্রধান শিক্ষক গ্রামে লিফলেট বিলি করেছেন, দেওয়াল লিখন করেছেন, গ্রামের মানুষদের মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার বিলি করেছেন। প্রজেক্টর ব্যবহার করে শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন স্কুলে। পৃথ্বীরাজবাবুর কথায়, ‘‘লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকলেও গ্রামের বাসিন্দাদের পারস্পরিক দূরত্ব কেন প্রয়োজন, সেটা বলেছি। একই সঙ্গে ডেঙ্গি নিয়েও প্রচার করেছি।’’
রায়না মুসলিম প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসহায় মুখোপাধ্যায় শিক্ষারত্ন পাচ্ছেন স্কুলছুট রুখে সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে পড়াশোনার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার প্রয়াসের জন্যে। তাঁর পরিবারের দান করা জমিতেই স্কুলটি গড়ে উঠেছিল। তার পরেও জমি বিবাদ ছিল। সে সব মিটিয়ে তিনি সরকারের অনুদানে স্কুল ভবন তৈরি করেন। শিশুশ্রম বন্ধ করে পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে প্রচার চালান। তাঁর কথায়, ‘‘সামাজিক বার্তা দিতে স্কুলে রক্তদান শিবির থেকে করোনার সময়ে মাস্ক বিলি করা হয়েছে। শিক্ষার উন্নতির জন্যে বিভিন্ন রাজ্যে আলোচনাসভায় যোগ দেওয়া হয়।’’