এ ভাবেই প্রতি দিন রুটির জোগান দিচ্ছেন এলাকাবাসী। নিজস্ব চিত্র
তিন বন্ধু। প্রতি দিনই তাঁরা আড্ডা দিতেন এক বন্ধুর কাঠগুদামে। সেখানেই এক দিন আলোচনায় ঠিক হয়, এলাকার কিছু দুঃস্থ পরিবারের জন্য যদি রাতের খাবারটা তুলে দেওয়া যায়। সেই ভাবনা থেকেই পথচলা শুরু জামুড়িয়ার ‘রুটি ব্যাঙ্কে’র। ওই তিন বন্ধু জানান, তাঁদের দলে এই মুহূর্তে আরও আট জন যোগ দিয়েছেন। পাশে থাকছে নানা পরিবারও।
এই ব্যাঙ্ক শুরু হয়েছিল ২০১৮-র এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। তিন বন্ধু, জামুড়িয়া হিন্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোহন রাম, নর্থ সিহারসোল প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিবকুমার সিংহ ও জামুড়িয়া নন্ডি রোড এলাকার কাঠগুদামের মালিক মহেশ সিংহ। রোহনবাবুরা বলেন, ‘‘আমরা এলাকায় ঘুরে দেখি, এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা দু’বেলা পেট ভরে খেতে পান না। এমন অনেক প্রবীণও আছেন, যাঁরা বাড়িতে একাই থাকেন। আমরা পরিকল্পনা করি, এঁদের সবার মুখে খাবার তুলে দেওয়ার।’’
যেমন ভাবা, তেমন কাজ। কাঠগুদামেরই একটি ঘরে তৈরি হল রুটি ব্যাঙ্কের কার্যালয়। মহেশবাবু জানান, প্রথমে তাঁরা তিন জন নিজেদের বাড়ি থেকে প্রতি দিন সন্ধ্যায় চারটি করে রুটি-আনাজ এনে তিনটি বাড়িতে তা পৌঁছে দিতেন।
দিন কয়েক এমনটা চলার পরে আরও অন্তত ৫০টি পরিবার রুটি দিতে আগ্রহী হন বলে জানান শিবকুমারবাবু। নন্ডি রোড, নন্ডি তিন নম্বর, জামুড়িয়া গ্রাম, দামোদরপুর গ্রাম, জামুড়িয়া ছ’নম্বর, বাইপাস প্রভৃতি এলাকায় রুটি পৌঁছে দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন গোপাল দাসের মতো আরও আট জন। তাঁরা এই মুহূর্তে ৪০টি পরিবারকে রাতের খাবার দিচ্ছেন বলে জানান মহেশবাবুরা।
যে পরিবারগুলি রুটি দিচ্ছে, তাদের ফি দিন সন্ধ্যায় রুটি তহবিলে চার থেকে পাঁচটি করে রুটি এবং বাড়িতে যা তরকারি হয়, তা রুটি ব্যাঙ্কে জমা করতে হয়। কিন্তু বাড়ি বাড়ি রুটি-তরকারি পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা কেন? শিবকুমারবাবুর কথায়, ‘‘এর কারণ, এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা খেতে না পেলেও লাইনে দাঁড়িয়ে রুটি নেবেন না। আমাদের লক্ষ্য, তাঁদের কাছে পৌঁছনো। তবে কোনও দিন যদি তরকারি কম পড়ে, তা হলে সেই দিন আমরা আচার বিলি করি।’’
এমন উদ্যোগে পাশে থাকতে পেরে খুশি গুড্ডু হরিজন, মনোজ পাসোয়ান, নরেশ রাজবংশীরাও। তাঁদের কথায়, ‘‘কয়েকটা রুটি দিয়ে যদি অসহায় কিছু মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়, তার থেকে ভাল কিছু হয় না। এমন একটা কাজে যুক্ত হতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে হচ্ছে।’’ এই উদ্যোগে সামগ্রিক ভাবে পাশে রয়েছেন মনমোহন মিশ্র, গোর্বধন আগরওয়ালেরাও।