সুনীল মুর্মু। নিজস্ব চিত্র।
সেই ১৫ বছর বয়স থেকে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছেন। জোগাড়ে থেকে রাজমিস্ত্রি হয়েছেন। কাজের খোঁজে ছুটেছেন ভিন্ রাজ্যেও। তবে গত কয়েক বছর ধরে এলাকাতেই বেশি কাজ করেছেন। কিন্তু আগামী দিনে আর কাজ পাবেন কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির ইছাপুর দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা সুনীল মুর্মু। এ বার ওই পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের হয়ে জিতেছেন তিনি। সুনীলের আশঙ্কা, কাউন্সিলর হয়ে গিয়েছেন বলে এলাকার লোকে হয়তো কাজ দিতে ইতস্তত করবেন। কিন্তু কাজ না পেলে, যে সংসার চলবে না—দুশ্চিন্তা তাঁর।
সুনীলের স্ত্রী অঞ্জলি মুর্মু জমিতে কাজ করেন। দুই মেয়ে রয়েছে তাঁদের। মেমারি বাসস্ট্যান্ডের তৃণমূলের বাসকর্মী ইউনিয়ন অফিসে বসে বছর সাঁইত্রিশের সুনীল বলেন, ‘‘বেশ কয়েক বছর আর ভিন্ রাজ্যে কাজে যাইনি। মেমারিতেই পাড়া, আশপাশে রাজমিস্ত্রির কাজ করি। প্রথম থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে ছিলাম। দল জনজাতি হিসাবে প্রার্থী করায় আপত্তি করিনি। কিন্তু জেতার পরে নানা রকম চিন্তা মাথায় আসছে। কিছুটা ফাঁপরে পড়ে গিয়েছি।’’ কেন?
সুনীল বলেন, ‘‘কাউন্সিলর হওয়ার পরে পাড়ার লোকজন আর নির্মাণ করতে ডাকবেন কি না, সেটাই ভাবছি। আবার হয়তো দেখা যাবে, আমার হাতে যে পাঁচিল তৈরি হয়েছে, তা নিয়েই কোনও কারণে বিতর্ক বাধল। তখন লোকে বলবে, ওই পাঁচিল কাউন্সিলরই তৈরি করেছে। আচ্ছা সমস্যা!’’ তাঁর পাশে বসে মেমারির ওই ইউনিয়নের সম্পাদক বাবু হাজরাও জানান, সুনীল জেতার পর থেকে খালি ওই চিন্তা করছেন। জেতার খুশির থেকেও পেটে টান পড়বে কি না, সেই ভাবনা করছেন উনি।
ভোটের কয়েক দিন কাজ থেকে ছুটি নিয়েছিলেন। জেতার পরের দিনই মেমারি শহরের বাইরে দুর্গাডাঙায় কাজ করতে ছুটে গিয়েছিলেন সুনীল। তাঁর কথায়, ‘‘ওয়ার্ডের মানুষের দায়িত্ব নিয়েছি। কাজ খুঁজতে তো ভিন্-রাজ্যে যেতে পারব না। তাই শহরের বাইরে কাজ করছি।’’ ভোটের আগে যে সব কাজের বরাত নেওয়া ছিল, এখন সেই সব কাজ করছেন তিনি। কিন্তু বুধবার, শপথগ্রহণের পরে, পরিস্থিতি বদলে যাবে, আশঙ্কা তাঁর।
আর প্রতিবেশীরা কী বলছেন? স্থানীয় বাসিন্দা তুলাই শেখ, রাম মুর্মু, কার্তিক সোরেনরা হেসে ফেলেছেন সুনীলের ভাবনার কথা শুনে। তবে তাঁর চিন্তা যে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়, সে কথাও মেনেছেন তাঁরা।
মেমারি পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান, তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী স্বপন বিষয়ীও বলেন, ‘‘রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আর পেশা এক নয়। রাজনীতির চাপে পেশার ক্ষতি না হয়, সেটা সবাইকে বুঝতে হবে।’’