কাটোয়া কাশীরাম দাস বিদ্যায়তনে চলছে সাফাই। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
করোনা-সংক্রমণ বাড়ায় স্কুল খুলেও গত ডিসেম্বরে ফের বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পঠন-পাঠন। দেড় মাস পরে, আজ, বৃহস্পতিবার ফের স্কুলের পথে পা বাড়াবে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা। খোলা হবে প্র্যাক্টিক্যাল রুমও। হস্টেল খোলারও নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতর। এখনও ১৫ বছরের নীচের ছেলেমেয়েদের জন্য টিকা আসেনি। সে কারণে ওই সব পড়ুয়াদের অভিভাবকের অনুমতির চিঠি স্কুলে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রতিটি স্কুলকে ‘থার্মাল গান’ দিয়ে পড়ুয়া, শিক্ষক, কর্মচারীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপতে হবে। ‘মাস্ক’ পরা বাধ্যতামূলক। তবে শেষ পর্যন্ত কত জন পড়ুয়া স্কুলমুখী হবে, তার উপরেই পরবর্তী পরিকল্পনা নির্ভর করছে বলে শিক্ষকেরা জানিয়েছেন।
পূর্ব বর্ধমানের স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শ্রীধর প্রামাণিক বলেন, ‘‘সবটাই করোনা-বিধি মেনে করতে হবে। বুধবারের মধ্যে সব স্কুলেই জীবাণুনাশক ছড়ানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকা মেনে সব স্কুল খুলবে।’’
স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রে জানা যায়, সব স্কুলই ছাত্রছাত্রীদের জন্য মাস্ক, জীবাণুনাশক রাখবে। টিফিন খাওয়ার জন্য বাইরে বেরোতেও দেওয়া হবে না। কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ আবার টিফিন খাওয়ার সময়েও প্রতিটি ঘরে এক জন করে শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে রাখার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছেন। পড়ুয়া সংখ্যার উপরে নির্ভর করবে দূরত্ব-বিধি মানা। তবে একটি বেঞ্চে তিন জনের বেশি বসতে দেওয়ার পক্ষপাতী নয় স্কুলগুলি। স্কুল দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনও স্কুলের ভিতরে অভিভাবকদের ঢুকতে দেওয়া হবে না। সর্দি-কাশি-জ্বর থাকলে স্কুলে আসতে নিষেধ করতে হবে। প্রতিটি স্কুলের একটি ঘর ‘আইসোলেশন রুম’ হিসাবে রাখতে হবে। স্কুল শুরুর পরে, প্রতি ক্লাসে ১০ মিনিট ধরে পড়ুয়াদের করোনা-বিধি নিয়ে সচেতন করা হবে।
‘অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস’ সংগঠনের জেলা সভাপতি কৌশিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন পঠন-পাঠন বন্ধ ছিল। স্কুল খোলার দাবি করেছিলাম আমরা। অনেক পড়ুয়ার সুবিধা হবে।’’
শিক্ষকদের দাবি, দ্বিতীয় দফায় স্কুল খোলার আগেই পরিকাঠামোগত সংস্কারের জন্য রাজ্য সরকার স্কুলের নামে নির্দিষ্ট টাকা অনুমোদন করে। বেশির ভাগ স্কুলেই সে কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। তবে দেড় মাস স্কুল বন্ধ থাকায় আগাছা জন্মেছে অনেক জায়গায়। কয়েক দিনের মধ্যে তা পরিষ্কার করে দেওয়া হবে, জানিয়েছেন শিক্ষকেরা। মেমারির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কেশব ঘোষালের দাবি, ‘‘প্রতিদিন স্কুল শুরুর আগে ও শেষে শৌচাগার পরিষ্কার করা হবে। কোনও বেঞ্চেই তিন জনের বেশি পড়ুয়াকে বসতে দেওয়া হবে না। পড়ুয়াদের উপস্থিতি দেখে বাকি পরিকল্পনা ঠিক করা হবে।’’
কালনার মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রীমন্ত ঘোষ জানান, প্রতিটি শ্রেণি ভেঙে অনেকগুলি ঘরে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। টানা সাতটি ক্লাস হবে। বর্ধমানের ইছলাবাদ বিবেকানন্দ বালিকা বিদ্যালয়, বর্ধমান ১ ব্লকের কলিগ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রানু চক্রবর্তীদের দাবি, ‘‘বাইরে থেকে টিফিন বা জল কেনা যাবে না। সব পড়ুয়াদের বাড়ি থেকে আনতে বলা হয়েছে।’’ বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শ্রাবণী মল্লিকের দাবি, ‘‘পুরসভার ভরসায় না থেকে নিজেরাই যতটা সম্ভব স্যানিটাইজ় করেছি। বুধবার পর্যন্ত পুরসভা জীবাণুনাশক স্প্রে করতে আসেনি। না এলে, আমরা ফের স্কুল খোলার আগে স্যানিটাইজ় করে নেব।’’ দাঁইহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোহর দাস, কাটোয়া রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শুভেন্দু রায় থেকে কালনা সিমলন অন্নপূর্ণা কালি বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক দেবনাথ শিকদারেরাও জানান, বিধি মেনেই স্কুল চালানো হবে।