টাকা পেয়ে খুশি অনেকেই। বারাবনিতে। —নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রের পোর্টাল থেকে নেওয়া পরিসংখ্যান ভুল থাকায় একশো দিনের বকেয়া মজুরি প্রাপকের সংখ্যা বাড়ছে, মঙ্গলবার পুরুলিয়ায় জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই দিনেই পশ্চিম বর্ধমানের বারাবনিতে কিছু বাসিন্দা অভিযোগ তুললেন, তাঁরা কাজ করে থাকলেও তালিকায় নাম না ওঠায় টাকা পাচ্ছেন না। বিষয়টি খোঁজ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে ব্লক প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পশ্চিম বর্ধমানে ১২ হাজার উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মোট প্রায় ৭ কোটি টাকা বকেয়া বাবদ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিশ্বনাথ বাউড়ি জানান, জেলার ৮টি ব্লকের ৬২টি পঞ্চায়েতে পাওনা রয়েছে প্রায় ১৭ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার বারাবনির নুনি পঞ্চায়েত কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, জনা কয়েক উপভোক্তা টাকা না পাওয়ার অভিযোগে সরব হয়েছেন। নাকটি কন্যাপুর গ্রামের বাসিন্দা শ্রীকান্ত বাউড়ির অভিযোগ, ‘‘বছর দুয়েক আগে আমার স্ত্রী বুনি বাউড়ি ১৫ দিন কাজ করেন। কিন্তু টাকা পাওয়ার তালিকায় তাঁর নাম নেই।’’ শিখা বাউড়ি, সন্ধ্যা বাউড়িরা অভিযোগ করেন, তাঁরাও ১০ দিন, ১৫ দিন করে কাজ করেছেন। কিন্তু পঞ্চায়েত থেকে জানানো হয়েছে, কাজের তালিকায় তাঁদের নাম নেই। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘শিবিরে গিয়ে আমরা ফর্ম পূরণ করেছি। যখন টাকা দেওয়া হচ্ছে, তখন জানলাম আমরা পাব না।’’
এমন সমস্যার কারণ কী? নুনি পঞ্চায়েতের প্রধান মাধব তিওয়ারির দাবি, ‘‘গত বোর্ডে কোনও ভাবে উপভোক্তাদের তালিকা থেকে ওঁদের নাম বাদ পড়েছিল। এমন কয়েকটি নাম পেয়েছি। কী ভাবে সমস্যা মেটানো যায়, ভাবছি।’’ বারাবনির বিডিও শিলাদিত্য ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিষয়টি জানি না। খোঁজ নেব।’’ তাঁর দাবি, মঙ্গলবার পর্যন্ত ব্লকের সমস্ত উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়ে গিয়েছে। চার জন শ্রমিকের মৃত্যু হওয়ায় নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে তাঁদের নিকটাত্মীয়দের টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।
মঙ্গলবার সালানপুরের এথোড়া পঞ্চায়েতের মাধাইচকে গিয়ে দেখা গেল, প্রায় দু’বছর পরে একশো দিনের টাকা পাওয়ায় খুশি উপভোক্তাদের অনেকেই। এই গ্রামের প্রায় ৮০ শতাংশ বাসিন্দাই একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করে সংসার পালন করেন। এমনই এক জন রোমা কোড়া বলেন, ‘‘দু’বছর টাকা পাইনি। পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালিয়েছি। এই টাকা পেলে সুবিধা হবে।’’ পরিমল কোড়া বলেন, ‘‘গত বছর গ্রামে চাষ ভাল হয়নি। ফলে, চাষের কাজও পাইনি। ইটভাটায় কাজ করে কোনও রকমে চলেছে। একশো দিনের কাজ যেন আর বন্ধ না হয়, এটাই চাই।’’ সালানপুরের বিডিও দেবাঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘‘ব্লকের শ্রমিকদের পাওনা ১ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকার পুরোটাই ব্যাঙ্কে পাঠয়ে দেওয়া হয়েছে।’’