আসানসোলের হকার্স মার্কেট। অভিযোগ, অনেক হকারই দোকান নিয়ে তা ভাড়া দিয়েছেন। নিজস্ব চিত্র।
শহর জুড়ে সরকারি জমি দখল করে চলা দোকান, বাজারগুলি তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, জানাল আসানসোল পুরসভা। কিন্তু এই কাজে প্রধান কাঁটা— আসানসোল বাজারের ফুটপাত দখল মুক্ত করা। বুধবার এলাকায় গিয়ে হকারদের সঙ্গে আলোচনা করেন পুর-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হকারদের দাবি, গির্জামোড়ে তৈরি হওয়া হকার্স মার্কেটের সংস্কার করা না হলে, তাঁরা বাজারের ফুটপাত ছাড়বেন না। যদিও পুরসভার তরফে হকারদের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
হাটন রোড থেকে রাহা লেন, প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলাকায়, আসানসোল বাজারে ফুটপাত দখল করে বেচাকেনা চলে বলে অভিযোগ শহরবাসীর একাংশের। পরিস্থিতি এমনই যে, শহরবাসীকে মূল জিটি রোড ধরে যাতায়াত করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে শহরে যানজটের সমস্যাও বাড়ছে বলে মত ট্র্যাফিক পুলিশের। পাশাপাশি, অস্থায়ী দোকানগুলিতে প্লাস্টিকের ছাউনি, ইতিউতি ঝুলতে থাকা বিদ্যুতের খোলা তার, হুকিংয়ের মতো নানা কারণে, বাজারের ভিতরের রাস্তা অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। ফলে, বাজারে আগুন লাগলে দমকলের ইঞ্জিন ঢুকতে পারে না।
এই অবস্থায় আসানসোলের পুর-প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ফুটপাত দখল করে হকারেরা ব্যবসা করছেন। এর ফলে, সাধারণ শহরবাসীর চলাফেরায় সমস্যা হচ্ছে। অভিযোগ জানিয়ে প্রতিদিন আমাদের বহু মানুষ ফোন করেনা। আমরা তাই হকারদের দ্রুত ফুটপাত ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।” অমরনাথের দাবি, উঠে যাওয়ার জন্য হকারেরা দু’দিন সময় চেয়েছেন। নির্দেশ মানা না হলে, পুরসভা পরবর্তী পদক্ষেপ করবে।
এ দিকে, পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬-এ গির্জা মোড়ে আসানসোল বাজারের হকারদের জন্য হকার্স মার্কেট তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তার পরেও আসানসোল বাজারের ফুটপাত ছাড়েননি বেশির ভাগ হকারই। যদিও, মহম্মদ শামিম নামে এক হকার বলেন, “হকার্স মার্কেটটি সংস্কার করা হচ্ছে না। ফলে, সেখানে ক্রেতারা আসতে চান না। ওখানে ব্যবসা মার খাবে। তাই বাজার ছেড়ে যেতে পারিনি।”
যদিও হকারদের এই দাবির সঙ্গে সহমত নন পুর-কর্তাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, হকারদের একটি বড় অংশই নিজেদের নামে নেওয়া হকার্স মার্কেটের দোকানগুলি অন্যদের ভাড়াতে দিয়েছেন। আর নিজেরা ফুটপাত দখল করে ব্যবসা চালাচ্ছেন। গির্জা মোড় হকার্স মার্কেটের দোকান মালিক মহম্মদ গুলজার, রৌশন বর্মন, কাজি নঈম-সহ আরও কয়েক জনও বলেন, “হকার্স মার্কেটে ব্যবসার কোনও সমস্যা নেই। পুরসভা এখানে সংস্কারও করে। কিন্তু হকারদের একাংশ বেশি রোজগারের জন্য এখানকার দোকানগুলি ভাড়া দিয়েছেন।” ঘটনাচক্রে, হকার্স মার্কেটের চা ব্যবসায়ী আনন্দ গুপ্ত জানান, তিনি দোকানটি অন্য এক জনের থেকে মাসে ১,৫০০ টাকা ভাড়ায় নিয়েছেন।
আসানসোলের পুর-কমিশনার নীতীন সিংহানিয়া বলেন, “আমরা হকার্স মার্কেট ঘুরে দেখি। হকারদের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। হকার-সমস্যা নিয়ে পুরসভা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।”