ধুন্ধুমার: ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ডিভিসি মোড়ে পুলিশ ও বন্ধ সমর্থনকারীদের মধ্যে গোলমাল। ছবি: বিকাশ মশান
জেলা জুড়ে বিক্ষিপ্ত অশান্তি, পরিবহণ-দুর্ভোগ, কড়া পুলিশি নজরদারির মধ্য দিয়েই বৃহস্পতিবার দশটি শ্রমিক সংগঠনের ডাকা সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়েছে।
অশান্তি-অবরোধ: দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এসবিএসটিসি) দুর্গাপুর ডিপোর সামনে ও গ্যামন ব্রিজ লাগোয়া এলাকায় পথ অবরোধ করেন বাম-কংগ্রেস কর্মী, সমর্থকেরা। দুর্গাপুর পশ্চিম রেল গেটের কাছে অবরোধের জেরে স্টেশনে একটি দূরপাল্লার ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ে। প্রতি ক্ষেত্রে দ্রুত পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। দুর্গাপুর স্টেশন লাগোয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে এসবিএসটিসি বাস ছাড়ার তোড়জোড় করতেই ধর্মঘট সমর্থকেরা বাসের সামনে বসে পড়েন। বাঁকুড়া মোড়ে বন্ধ সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। বচসায় জড়ান সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকার। এ ছাড়া, বামকর্মীদের মোটরবাইক মিছিল পানাগড় বাজারে যেতেই পুলিশ তা আটকে দেয়। পাশাপাশি, ডিভিসি মোড়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধ শুরু করেন ধর্মঘটীরা। সেখানে পুলিশ লাঠি চালিয়ে তাঁদের সরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। নামানো হয় কমব্যাট ফোর্সও। সিপিএম নেতা পঙ্কজবাবু বলেন, ‘‘পুলিশের লাঠিতে হাতে চোট পেয়েছি। জামা ছিঁড়ে গিয়েছে। আমাদের ৩০-৩৫ জন জখম। মহিলাদের মারধর করেছে পুরুষ পুলিশকর্মীরা। এর প্রতিবাদে আমরা শুক্রবার কোকআভেন থানা ঘেরাও করব।’’ যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।
পরিবহণ: আসানসোল মহকুমার ১১০টি রুটের কোথাও বেসরকারি বাস চলেনি। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের কিছু দূরপাল্লার বাস রাস্তায় দেখা গিয়েছে। যদিও, পর্যাপ্ত সংখ্যায় অটো-টোটো চলেছে আসানসোলে। তবে বাস না চলায় যাত্রীদের চড়া ভাড়ায় অটো-টোটো রিজ়ার্ভ করে যেতে হয়েছে। বিএনআর বাসস্টপে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী চন্দনা দাম বলেন, ‘‘কালাঝরিয়া যাব। বাস পাচ্ছি না। এমনিতে ভাড়া লাগে ১২ টাকা। কিন্তু আজ ১৫০ টাকা দিয়ে অটো রিজ়ার্ভ করার কথা বললেন চালক।’’ দুর্গাপুর মহকুমায় সকালে কয়েকটি মিনিবাস রাস্তায় নামলেও, ডিভিসি মোড়ে বন্ধ সমর্থকদের আবরোধের পরে সেগুলি আর চলেনি দিনভর, জানান মিনিবাস মালিক সংগঠনের তরফে কাজল দে। কোথাও বড়বাসের দেখা মেলেনি। তবে এসবিএসটিসি-র বাস চলেছে। অটো চলেছে। কিন্তু সংখ্যায় খুবই কম।
বাজার-হাট: আসানসোল মহকুমার অনেক বাজারই বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে। সেইমতো আসানসোল বাজার, বার্নপুর, নিয়ামতপুর, বরাকরের বাজার বন্ধ ছিল। বারাবনির দোমহানি ও রূপনারায়ণপুর বাজারে স্বাভাবিক কেনাকাটা হয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। রানিগঞ্জে ৯০ শতাংশ দোকান বন্ধ ছিল। তবে দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজার, এসবিএসটিসি গ্যারাজ মোড়, গ্যামন ব্রিজ, দুর্গাপুর স্টেশন লাগোয়া বাসস্ট্যান্ড প্রভৃতি এলাকায় অধিকাংশ দোকান খোলা ছিল। দুর্গাপুর স্টেশন লাগোয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বন্ধ সমর্থকদের আর্জি মেনে খোলা দোকান বন্ধ রাখেন বিক্রেতারা। পরে কয়েকটি দোকান ফের খোলা হয়। সিটিসেন্টারে শপিংমল খোলা ছিল। তবে বেনাচিতির শপিংমল বন্ধ ছিল।
পুলিশ-প্রশাসনের ব্যবস্থা: জেলার সমস্ত ‘স্পর্শকাতর’ এলাকায় কড়া পুলিশি নজরদারি চোখে পড়েছে। আসানসোলের আপকার গার্ডেনে সিপিএম ও তৃণমূলের দু’টি দলীয় কার্যালয় আছে। বিগত ধর্মঘটের দিনগুলিতে এখানে দু’দলের সমর্থকেরা বহু বার অশান্তি হয়েছে। সেখানে প্রচুর সংখ্যায় পুলিশ মোতায়েন ছিল। সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ তৃণমূলের পরিবহণকর্মীদের একটি মিছিল আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ড থেকে বার হলেও সেটিকে আপকার গার্ডেন চত্বরে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ আপকার গার্ডেন কার্যালয় থেকে সিপিএমের একটি মিছিল বেরোলেও পুলিশি ঘেরাটোপেই আশপাশের অঞ্চল প্রদক্ষিণ করে।
দিনের শেষে আইএনটিইউসি নেতা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, সিটু নেতা বংশগোপাল চৌধুরীরা দাবি করেন, ‘‘পুলিশ ও তৃণমূলের বাধা সত্ত্বেও মানুষ আমাদের ডাকে ধর্মঘট পুরোপুরি সফল করেছেন।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘ধর্মঘট ব্যর্থ। জেলাবাসী বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা ধর্মঘটের পক্ষে নন, উন্নয়নের পক্ষে।’’
এ দিকে, জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি দাবি করেন, ‘‘জেলার সব সরকারি কার্যালয়ে স্বাভাবিক কাজ হয়েছে।’’ আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত জানান, ৩০-৪০ জনকে আটক করা হয়। পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আসানসোলে কোনও ধরপাকড় হয়নি, জানা গিয়েছে কমিশনারেট সূত্রে।