‘ভার্চুয়াল সভায়’। পানাগড়ে। নিজস্ব চিত্র
জেলা জুড়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ‘জনসংযোগ র্যালি’ দেখাতে মঙ্গলবার বিভিন্ন পদক্ষেপ করল বিজেপি। রাজ্য সরকারের জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের চাষিরা— দলের প্রাক্তন সভাপতি তথা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এই অভিযোগকে সামনে রেখে পশ্চিম বর্ধমানে প্রচারে নামতে চাইছেন বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। যদিও বিজেপির এই কর্মসূচির বিরোধিতায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে সিপিএম। সরব হয়েছে তৃণমূলও।
দুর্গাপুরের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি দলীয় কার্যালয়, রাস্তার ধারে গাছতলায়, প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া করে ‘ভার্চুয়াল র্যালি’ দেখানোর ব্যবস্থা করে। একই ভাবে আসানসোল পুরসভার সব ওয়ার্ডেও র্যালি দেখানোর ব্যবস্থা করা হয় বলে বিজেপি নেতৃত্ব জানান। এ দিন বিজেপির ওই ‘ভার্চুয়াল র্যালি’ চলার সময়ে দুর্গাপুরের আশিস মার্কেট, এমএএমসি, ডিপিএল, ওয়ারিয়া, সগড়ভাঙা-সহ বিভিন্ন জায়গায় প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম। সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায়সরকার অভিযোগ করেন, ‘‘করোনা-সঙ্কটের সময়ে বিজেপি নেতাদের কোথাও দেখা মিলছে না।’’ তবে বিজেপি নেতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দলের নেতা-কর্মীরা মানুষের পাশে রয়েছেন।’’
চাষিদের বঞ্চনার যে অভিযোগ তুলেছেন অমিত শাহ, সে বিষয়টি নিয়ে তাঁরা প্রচারে নামতে চাইছেন বলে জানিয়েছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। পশ্চিম বর্ধমান শিল্পপ্রধান জেলা। কিন্তু তার পরেও এখানে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয় বলে জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়। জেলার কাঁকসা, দুর্গাপুর-ফরিদপুর, জামুড়িয়া, বারাবনি, সালানপুরের মতো বিভিন্ন ব্লকে বহু মানুষ চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত।
সে প্রসঙ্গে তুলে বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই দাবি করেন, ‘‘আমাদের নেতা জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কৃষাণ সম্মান নিধি’ প্রকল্পে দেশের প্রায় সাড়ে ন’কোটি চাষিকে বার্ষিক ছ’হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাজ্য তথ্য না দেওয়ায়, জেলা-সহ গোটা রাজ্যের কৃষকেরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’’
বিজেপি সূত্রের দাবি, জেলার যে-যে এলাকায় চাষাবাদ হয়, মূলত সেই সব এলাকায় বিষয়টি মানুষের সামনে তুলে ধরার পরিকল্পনা করা হবে। এ-ও বলা হবে, ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’-সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পাশে কেন্দ্রীয় সরকার দাঁড়াতে চাইছে। কিন্তু তৃণমূল ও রাজ্য সরকারের ‘বাধা’য় তা সম্ভব হচ্ছে না।
জেলা রাজনীতির গতিপ্রকৃতির নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই এই প্রচার চালাতে চাইছে বিজেপি। যদিও লক্ষ্মণবাবু বলেন, ‘‘ভোটের জন্য নয়, প্রকৃত সত্যটা মানুষের কাছে তুলে ধরা হবে। অমিত শাহের ভার্চুয়াল র্যালি থেকে সে সংক্রান্ত প্রচারের দিশা পেয়েছেন দলের কর্মীরা।’’
তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘অমিত শাহের বক্তব্য কোনও তথ্যের উপরে ভিত্তি করে বলা নয়। তিনি এবং তাঁর দল রাজ্যবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।’’ পাশাপাশি, তাঁর দাবি, রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জন্য প্রায় দেড়শো কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে প্রচারও চালানো হতে পারে বলে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি।