প্রতীকী ছবি।
টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার নম্বর বাড়ানো ও ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ায় অভিযুক্ত কাটোয়া কলেজের প্রাণিবিদ্যার শিক্ষকের বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুললেন এক শিক্ষিকাও। বৃহস্পতিবার রাতে বিভাগীয় প্রধান নির্ভীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কলেজের অধ্যক্ষ নির্মলেন্দু সরকার ও পরিচালন সমিতির সদস্য তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। ওই শিক্ষিকার দাবি, নির্ভীকবাবুর সঙ্গে সম্পর্কে রাজি না হওয়ায় কলেজে বিভাগের ভিতরেই যৌন হেনস্থা করা হয়েছে তাঁকে। আরও দুই শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনে মদত দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি।
যদিও যদিও পুরো ঘটনাটিই সাজানো বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক। মদত দেওয়ায় অভিযোগও অস্বীকার করেছেন ওই দুই শিক্ষক-শিক্ষিকা। কাটোয়া কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, তদন্ত শুরু হয়েছে। অধ্যক্ষ নির্মলেন্দু সরকার শুক্রবার বলেন, “প্রাণিবিদ্যার এক শিক্ষিকা বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছেন। এটা উর্ধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। তবে ওই শিক্ষিকার ভয়ের কোনও কারণ নেই। কলেজে প্রায় ৫০টি সিসিটিভি রয়েছে। আমরা সব কিছুই খতিয়ে দেখছি। কর্মক্ষেত্রে কোনও অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না।’’
কাটোয়ার বাসিন্দা ওই শিক্ষিকার দাবি, “দুই সহকর্মী রিম্পা ঘোষ ও সায়ন্তন হাজরার মদতেই বিভাগীয় প্রধান নির্ভীক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে দিনের পর দিন নানা ভাবে মানসিক অত্যাচার করেছেন। অশালীন আচরণ করেছেন। ওঁর প্রেমের প্রস্তাবে আমি রাজি না হওয়ায় জোর করে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেন। কলেজের মধ্যেই অকারণে স্পর্শ, অশ্লীল আচরণ করতেন।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করে আমাকে দিনের পর দিন যৌন হেনস্থা করেছেন উনি। সুবিচার চেয়ে উপযুক্ত তধ্য প্রমাণ-সহ অধ্যক্ষ ও বিধায়কের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।’’
ওই শিক্ষিকার মায়েরও দাবি, ‘‘মেয়েকে কর্মক্ষেত্রে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য চাপ দিতেন নির্ভীক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজি না হওয়াতেই দীর্ঘদিন মানসিক নির্যাতন করেছেন। মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’’
যদিও অভিযুক্ত সায়ন্তন হাজরা বলেন, “অভিযোগ শুনে আমি হতবাক। বিন্দুবিসর্গ জানি না। এর পিছনে চক্রান্ত রয়েছে। উপযুক্ত তদন্ত হওয়া উচিত।’’ রিম্পাদেবীরও দাবি, “আমি এক জন মহিলা হয়ে কি অন্য এক সহকর্মীর যৌন হেনস্থায় মদত দিতে পারি! তেমন হলে আমিই অধ্যক্ষকে খবর দিতাম। পরিকল্পনা করে ফাঁসানো হচ্ছে আমাদের।”
নির্ভীক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও দাবি, “আজ ছ’মাস ধরে লকডাউন চলছে। যৌন হেনস্থা হলে এত দিন পরে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে কেন? এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওই শিক্ষিকা কলেজে অনেক অনৈতিক কাজ করছিলেন বলেই পড়ুয়ারা এক বার ওঁকে ঘেরাও করেছিল।’’ এর আগে এক ছাত্রীর সঙ্গে অশ্লীল কথা বলার যে অডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে তা নিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘এখন ডিজিটাল যুগ। আমার গলা নকল করে কেউ কথা বলতেই পারে। তদন্ত হলেই সত্যি বেরিয়ে আসবে।’’
কাটোয়ার বিধায়ক তথা পরিচারলন সমিতির সভাপতি সদস্য রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি নিয়ে কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’