বাঁ দিকে, এই সেই জমি। ডান দিকে, চলছে মাল্যদান। নিজস্ব চিত্র
বিবেকানন্দের পৈতৃক বাসভূমি ছিল কালনা ২ ব্লকের দত্তদ্বারিয়াটন গ্রামে। ঘর-দালান কিছু না থাকলেও পড়েছিল প্রায় ৪৪ শতক জমি। ওই জমি ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ার দাবি উঠছে গত পাঁচ দশক ধরে। বিবেকানন্দের ১৬১তম জন্মদিবসে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর পৈতৃক বাসভূমির জমি হস্তান্তর করা হল রামকৃষ্ণ মিশনের মুখ্য শাখা বেলুড় মঠকে। স্থানীয় মানুষজনের আশা, ওই জমিতে কোনও ভাল কাজ হলে তাঁদেরও উন্নয়ন হবে। রয়ে যাবে বিবেকানন্দের স্মৃতি, আদর্শ।
কালনা শহর থেকে কিলোমিটার সাতেক দূরে দত্তদ্বারিয়াটন গ্রাম। বিবেকানন্দের ভাই ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘প্রফেট অ্যান্ড প্যাট্রিয়ট’ গ্রন্থে তাঁদের আদি বাসভূমি হিসাবে এই গ্রামের কথা উল্লেখ করেছেন। গ্রামের মাঝামাঝি জায়গায় তাঁদের পৈতৃক জমিটি রয়েছে। তার একাংশে গড়ে উঠেছে মন্দির। সেখানে বিবেকানন্দের মূর্তি রয়েছে। মন্দিরের দেওয়ালে লেখা রয়েছে গ্রামের ইতিহাস। পাশে রয়েছে দত্তদ্বারিয়াটন বিবেকানন্দ উচ্চবিদ্যালয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহু বছর আগে ওই জমিতে মন্দির ছিল। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেটি খণ্ডহরে পরিণত হয়। ২০১১ সালের পর থেকে স্বামীজির পৈতৃক বাসভূমিকে সাজিয়ে তুলতে উদ্যোগী হন ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায়। আনুখাল পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিও তাতে শামিল হয়। ভাঙা মন্দিরের জায়গায় নতুন মন্দির গড়া হয়। পঞ্চায়েত সমিতির তরফে হেরিটেজ কমিশনে চিঠিও পাঠানো হয়। তবে তেমন উৎসাহ দেখা যায়নি। বছরখানেক আগে জানা যায়, বেলুড়ের বাসিন্দা গৌতম ঘোষ এবং সুকান্ত ঘোষ ওই জমিটির মালিক। দত্ত পরিবারেরই আত্মীয় তাঁরা। একটি সংস্থা মারফত ব্লক তৃণমূল সভাপতির কাছে জমিটি রামকৃষ্ণ মিশনকে হস্তান্তর করার প্রস্তাব আসে। মালিকদের সঙ্গে কথা বলার পরে এই বছরই জমি রেজিস্ট্রি করে দেন দুই মালিক।
এ দিন দত্তদ্বারিয়াটন গ্রামের মোড়ে বিবেকানন্দের মূর্তিতে মাল্যদানের পরে মিছিল করা হয়। তাতে হাঁটেন জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি দেবু টুডু, বর্ধমান রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী অজ্ঞেয়ানন্দ। প্রণব বলেন, ‘‘আমরা ক্ষমতায় আসার আগে থেকে স্বামীজির পৈতৃক বাসভূমি ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠার দাবি রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে জমিটির মালিকানা নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। পরে দত্ত পরিবারের আত্মীয়দের খোঁজ মেলে। তাঁরা রামকৃষ্ণ মিশনকে জমি দিতে রাজিও হন।’’ সভায় রামকৃষ্ণ মিশনের কাছে ওই জমিতে একটি আন্তর্জাতিক মানের গ্রন্থাগার তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। যেখানে থাকবে বিবেকানন্দের লেখা ও তাঁকে নিয়ে লেখা নানা বই। বর্ধমান রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক জানান, শিক্ষামূলক কিছু করারই লক্ষ্য থাকবে।