দুর্গাপুরে শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।
অবৈধ কয়লার কারবার নিয়ে অতীতে বহু বারই তরজায় জড়িয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুর থেকে ফের কয়লার অবৈধ কারবার নিয়ে নাম না করে অভিষেককে বিঁধলেন শুভেন্দু। তবে, তার পাল্টা সরব হয়েছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব।
এ দিন দুর্গাপুরের কল্পতরু ময়দানে দুর্গাপুর পুরভোট এখনও না হওয়ার প্রতিবাদে এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বিজেপি সভা করে। সেখানে যোগ দিয়ে শুভেন্দু বলেন, “এই কয়লাঞ্চলে বছরের পর বছর ধরে সব কয়লা তুলে নীচেটা ফাঁকা করে দিয়েছে। এক দিন সকালে, ঈশ্বর না করুন, শুনবেন অন্ডাল বসে গিয়েছে, পাণ্ডবেশ্বর বসে গিয়েছে, জামুড়িয়া বসে গিয়েছে, রানিগঞ্জ, সালানপুর বসে গিয়েছে।” এর পরেই তাঁর সংযোজন: “কয়লা ভাইপো সব ফাঁকা করে দিয়েছেন। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূমের এসপিরা চার বছরে ৪৩ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। তা হলে ভাইপোমণি কত টাকা তুলে নিয়ে গিয়েছেন? বীরভূমে এখনও পাথর লুট হচ্ছে।”
ঘটনা হল, এর আগে কখনও কয়লা পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ‘ফেরার’ বিনয় মিশ্রের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী ‘যোগাযোগ’, কখনও পরিচিত কয়লা-কারবারিদের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের ‘বৈঠকের’ ছবি টুইট করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এবং বিজেপি নেতৃত্বকে বিঁধতে দেখা গিয়েছে অভিষেককে। এ দিন শুভেন্দুর তোপ সে সূত্রেই কি না, তা নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছে জেলার রাজনীতিতে। তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের পাল্টা তোপ, “দুর্গাপুরে এসেছেন। শাসক দলের বিরুদ্ধে কিছু বলতে হবে। তাই বলেছেন। আমরা কোনও গুরুত্ব দিচ্ছি না। আজ কয়লা নিয়ে এ সব বলছেন। ২০২০ সালের আগে উনি কোন দলে ছিলেন? তখন তো কিছু বলেননি!”
কয়লার বেআইনি কারবার এবং তার তদন্ত নিয়ে জেলার রাজনীতি গত কয়েক বছর ধরেই তেতে রয়েছে। ২০২০-তে সিবিআই কয়লা পাচার সংক্রান্ত মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে। ইডি-ও এ বিষয়ে তদন্ত করছে। সিবিআই কয়লা পাচারের অভিযোগে এখনও পর্যন্ত মোট ৪৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাঁদের ৪১ জন জামিনে মুক্ত। পাশাপাশি, সিবিআই এই মামলায় চার্জশিটও দিয়েছে। সে সঙ্গে, কয়লা পাচার-কাণ্ডে ইডি রাজ্যের এক প্রভাবশালী নেতা তথা জেলা তৃণমূলের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে বেশ কয়েক বার ডেকেও পাঠিয়েছে বলে দাবি।
এই আবহে, বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি তরজা জেলার রাজনীতিতে কার্যত প্রতিদিনের ঘটনা। শুভেন্দুর এই মন্তব্য ফের সেই তরজাতেই ঘি ঢালল বলে মনে করছেন অনেকে। এ দিন শুভেন্দু সিপিএমকে কটাক্ষর পাশাপাশি, ডিপিএলের জমি, উচ্ছেদ প্রসঙ্গ, আনাজের দাম, ডিএ, ‘ইন্ডিয়া’ জোট প্রভৃতি নানা প্রসঙ্গে তৃণমূলকে বেঁধেন। তৃণমূল ও সিপিএম যদিও, শুভেন্দুর তোলা কোনও অভিযোগেই আমল দেয়নি।
সে সঙ্গে, শুভেন্দুর ডিপিএলের মাঠে সভা করা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। তবে এ দিন দেখা যায়, শুভেন্দুর সভা উপলক্ষে প্রচুর সংখ্যায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়।