‘‘জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এসে গিয়েছে’’— বুধবার ভরা আদালত চত্বরে হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টার পরে এমন কথাই বললেন সারদা কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া প্রথম অভিযুক্ত মনোজ নাগেল। মনোজের এমন কান্ডের পরে দুর্গাপুরের ‘এ’ জোনে বসবাসকারী তার পরিবারের দাবি, মানসিক অবসাদ, বাড়ির বিপর্যস্ত অবস্থার কারণেই এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি।
‘এ’ জোনে স্টিল প্ল্যান্টের ছোট্ট এক চিলতে কোয়ার্টারে থাকেন মনোজ ও তার মা, ভাই। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা সবিতাদেবী অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। খাতায়-কলমে সারদা গোষ্ঠীর অন্যতম ডিরেক্টর, কোটি টাকার মামলায় অভিযুক্ত মনোজের রাড়িতে দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। ঘরের দরজা-জানলাও ভেঙে গিয়েছে। মনোজের বাবা উপানন্দ নাগেল দুর্গাপুর স্টিল সমবায় সংস্থায় চাকুরিরত অবস্থাতেই মারা যান। সবিতাদেবী মাসে হাজার খানেক টাকা পেনশন পান। ভাই বনজও তৃতীয় বর্ষে এসে কলেজের পড়া মাঝপথে বন্ধ করে দেন। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘চেয়েচিন্তে পড়াশোনা করছিলাম। কিন্তু শেষ সীমায় এসে কলেজটা শেষ করতে পারিনি।’’ এখন তিনি বাবার অফিসেই সামান্য টাকায় রেশনের হিসেব রাখার কাজ করেন। মাস গেলে রোজগার দু’হাজার টাকারও কম। বনজ জানান, সংসার আর মামলার খরচ চালাতে গিয়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন তাঁরা। রায়নার কুঁয়ারায় প্রায় আড়াই বিঘে জমি ছিল তাঁদের। জামিনের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে বন্ধক দিতে হয়েছে তাও। এ ছাড়াও বিস্তর ধারদেনা রয়েছে।
প্রায় বছর তিনেক জেলে কাটিয়ে চলতি বছরের ১৬ মার্চ কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন পান মনোজ। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সিউড়ি আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু মনোজের দাবি, ওই দিন দুর্গাপুর আদালতে যাওয়ায় সিউড়িতে যেতে পারেননি তিনি। মনোজের ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন বাজেয়াপ্ত হওয়া প্যান কার্ড উদ্ধার করতে দুর্গাপুর আদালতে যান তিনি। বনজের দাবি, দাদার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সামান্য কিছু টাকা আছে। প্যান কার্ড না দেখালে বাজেয়াপ্ত হওয়া অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ব্যাঙ্ক। তারপরে বুধবার সিউড়িতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে বিচারক তা নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন। এরপরেই আদালত চত্বরে আত্মহত্যার চেষ্টা করে তিনি।
তবে সারদা কাণ্ডে অভিযুক্তদের আত্মহত্যার চেষ্টা নতুন নয়। এর আগে আরও এক অভিযুক্ত কুণাল ঘোষও আত্মহত্যার চেষ্টা ও হুমকি দিয়েছেন। মনোজও গত বছর জুন মাসের গোড়ায় শ্রীরামপুর আদালতে বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আমি যদি আত্মহত্যা করি, আপনি দায়ী থাকবেন।’’
এ দিন দাদাকে ফের জেল হাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শুনে ভাই বনজ বলেন, ‘‘এ বার জামিনের টাকা কোথা থেকে জোগাড় করব, জানি না। ভীষণ অসহায় লাগছে।’’ সবিতাদেবীরও দাবি, ‘‘বিনা দোষেই ছেলেকে তিন বছর এক মাস জেলে কাটাতে হয়েছে। প্রচণ্ড মানসিক চাপে রয়েছে ও। তাই হয়তো নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছে।’’