হাসপাতাল চত্বরে জটলা বন্ধু-পরিজনেদের। ইনসেটে, শেষাদ্রি হালদার। —নিজস্ব চিত্র।
রেললাইনের ধারে একটি ঝোপ থেকে দেহ মিলল ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রের। রবিবার রাতে বর্ধমানের কালনা গেট লাগোয়া রায়নগর এলাকায় রেলের আন্ডারপাসের কাছে রেললাইনের ধার থেকে শেষাদ্রি হালদার (১৯) নামে ওই ছাত্রের দেহ মেলে। তাঁর পরিবারের দাবি, শেষাদ্রীকে খুন করা হয়েছে। রেল পুলিশের অবশ্য প্রাথমিক অনুমান, বিষয়টি দুর্ঘটনা। লাইনের একেবারে ধার ঘেঁষে আড্ডা দেওয়ার সময় ধাক্কা লেগে গিয়েছে বলেও তাঁদের সন্দেহ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শেষাদ্রি গোলাপবাগের শরৎপল্লি এলাকার বাসিন্দা। ইউনির্ভাসিটি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। ওই রাতে কালনা গেট এলাকার বাসিন্দারাই শেষাদ্রি ও তাঁর এক সহপাঠীকে হাসপাতালে ভর্তি করান। তাঁর কাছে দুটি মোবাইল ছিল। সেই ফোন থেকেই খূবর দেওয়া হয় বাড়িতে। ওই পড়ুয়ার দেহে, মাথায়, ঘাড়ে কালশিটে দাগ মিলেছে বলেও তাঁর পরিবারের দাবি। শেষাদ্রির দাদা নিলাদ্রীবাবু ইউআইটিতেই পড়ান। সোমবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের মর্গে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘সত্যিটা জানতে তদন্ত চাইছি। ভাইকে খুন করা হয়েছে বলে আমাদের সন্দেহ।’’
শেষাদ্রির পরিবারের দাবি, ফোন পেয়েই ওই এলাকায় পৌঁছে যান তাঁরা। জানতে পারেন, আন্ডারপাসের উপর বর্ধমানমুখী ডাউন ললাইনের ধারে মুখ গোঁজা অবস্থায় দেহটি পড়ে ছিল। নীচে দুটি মোটরবাইক রাখা ছিল। তাঁদের দাবি, হাসপাতালে পৌঁছে শেষাদ্রিকে দেখতে না পেয়ে সেখানে ভর্তি তাঁর সহপাঠীর কাছে ঘটনাটি জানতে চান তাঁরা। কিন্তু ‘মাথা ঘুরছে, বমি পাচ্ছে’ বলে ওই সহপাঠী বিষয়টি এড়িয়ে যান বলেও তাঁদের দাবি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সহপাঠী বর্ধমান শহরের সাধনপুরে একটি মেসে থাকতেন। এ দিন সকালে ওই পড়ুয়াটির এক দাদা তাঁকে হাসপাতাল থেকে ব্যক্তিগত বন্ডে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। তারপরে অবশ্য তাঁর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা যায়নি। ওই ছাত্রের বাড়ি কোথায় তাও জানা যায়নি। রেল পুলিশের দাবি, ওই সহপাঠী তাঁদের জানিয়েছেন মোটরবাইক নীচে রেখে রেললাইন ধরে হাঁটছিলেন তাঁরা। তখনই ট্রেনে ধাক্কা লাগে শেষাদ্রীর।
এ দিন পুলিশ মর্গে ওই দু’জনের বেশ কয়েকজন সহপাঠী ও সিনিয়রদের দেখা যায়। তাঁদের দাবি, ওরা দু’জন খুব ভাল বন্ধু ছিল। পাড়া-পড়শিরাও শেষাদ্রীকে ভাল ছেলে বলেই জানান। তবে কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন শেষাদ্রির বাবা-মা। বাবা স্কুল শিক্ষক সুব্রতবাবু ও মা নিহারীকাদেবীও কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না।