দুর্গাপুরের স্কুলে জার্মান শেখাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক

গুটেন মরগেন। শব্দ দু’টোই জার্মান। মাস্টারমশাই ক্লাসে ঢুকতেই এ ভাবেই তাঁকে ‘সুপ্রভাত’ জানাল দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের বিদ্যাসাগর মডেল স্কুলের পড়ুয়ারা। কারণ ওই মাস্টারমশাই যে অবসর সময়ে জার্মান শেখাচ্ছেন।

Advertisement

অর্পিতা মজুমদার

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৭ ০০:৪৮
Share:

পাঠ: চলছে ভাষা শেখা। নিজস্ব চিত্র

গুটেন মরগেন। শব্দ দু’টোই জার্মান। মাস্টারমশাই ক্লাসে ঢুকতেই এ ভাবেই তাঁকে ‘সুপ্রভাত’ জানাল দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের বিদ্যাসাগর মডেল স্কুলের পড়ুয়ারা। কারণ ওই মাস্টারমশাই যে অবসর সময়ে জার্মান শেখাচ্ছেন। পড়ুয়ার তালিকায় রয়েছেন শহরের প্রবীণ থেকে স্কুল পড়ুয়া, সকলেই।

Advertisement

স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুচিন্ত চট্টরাজ। তিনিই সপ্তাহে এক দিন করে স্কুল শেষে নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের জার্মান ভাষার ক্লাস নেন। কথ্য জার্মানের সঙ্গে সঙ্গে চলছে ব্যাকরণ ও লেখার পাঠও।

কেন হঠাৎ এমন উদ্যোগ? সুচিন্তবাবু জানান, ২০০৯ সালে স্কুলে যোগ দিয়েছেন তিনি। ক্লাসকে আরও আকর্ষণীয় করতে কথার মাঝেসাঝে তিনি টুকটাক দু’-একটি জার্মান শব্দ ব্যবহার করতেন। পড়ুয়ারাও বেশ আগ্রহী হয়ে পড়ে ভাষাটি নিয়ে। কেউ কেউ মাস্টারমশাইকে অনুকরণেরও চেষ্টা করে। দু-এক জন ছাত্রের থেকে মাঝেসাঝেই আসতে থাকে আবদার, ‘‘স্যার জার্মান শিখব।’’ শেষমেশ ২০১৪ সালে শুরু হয় জার্মানের ক্লাস। জুটে যায় কয়েক জন ছাত্রও। প্রথম দিকে দশম শ্রেণির ছাত্ররাই ছিল। এখন অবশ্য তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে নবম শ্রেণির ছাত্ররাও।

Advertisement

সুচিন্তবাবু বলেন, ‘‘অনেকেই এখন জার্মানিতে গিয়ে উচ্চশিক্ষা করতে চাইছেন। সেখানে চাকরির সুযোগও বেশি। আমার ছাত্ররাও যাতে পরে প্রয়োজনে সে দেশে যেতে পারে, তার ভিত্তি তৈরি করছি। আগ্রহ থাকলে জার্মান ভাষায় লেখা শ্রেষ্ঠ সাহিত্যগুলিও পড়তে পারবে ছেলেমেয়েরা।’’ জার্মানিতে পড়াশোনা, চাকরি, এমনকী আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ‘কমন ইউরোপিয়ান ফ্রেমওয়ার্ক অফ রেফারেন্স ফর ল্যাঙ্গুয়েজ’ নির্দেশিত স্তর-বিভাগ মেনে জার্মানে দক্ষতার পরীক্ষাও দিতে হয়। নতুন একটা ভাষা শেখার পাঠ পেয়ে খুশি নবম শ্রেণির পৌলমী দাস, দশম শ্রেণির নয়ন চট্টোপাধ্যায়রাও। তাদের কথায়, ‘‘একটা বিদেশি ভাষা শিখছি ভেবেই ভাল লাগছে।’’

সুচিন্তবাবুর বাড়িতেও হয় জার্মানের ক্লাস। সেখানে আসেন কয়েক জন প্রবীণ। তেমনই এক জন অমিতাভ বাজপেয়ি বলেন, ‘‘ছেলে সুইৎজারল্যান্ডে থাকে। সেখানের প্রধান ভাষা জার্মান। ছেলের কাছে যেতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তাই ভাষাটা আয়ত্ত করার চেষ্টা করছি।’’

ইরেজি সাহিত্যের ছাত্র সুচিন্তবাবু ২০০১ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দু’বছরের জার্মান ভাষাশিক্ষা করেন। এ ভাবে ভাষার পাঠ দিতে পেরে তিনিও খুশি। তাঁর কথায়, ‘‘ভালবেসে ভাষাটা শিখেছিলাম। এ ভাবে তা কাজে আসায় ভাল লাগছে। গুটেন টাগ (‘দিন শুভ হোক’)!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement