দুর্ঘটনার পরে তৎপরতা পুলিশের। গ্যামন ব্রিজে়। ছবি: বিশ্বনাথ মশান।
ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা নেই। দুর্ঘটনা ঘটে প্রায়ই। বারবার রাস্তা অবরোধ করেও সমস্যার সুরাহা হয়নি। স্কুল যাওয়ার পথে সেই মোড়ে লরির ধাক্কায় দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার ফের বিক্ষোভ-অবরোধ হল দুর্গাপুরে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা নাগাদ শহরের কোকওভেন থানার গ্যামন ব্রিজ মোড়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম বিশাল সোরেন (৭)। সে স্থানীয় লেবারহাট হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। দুর্ঘটনার পরে ওই মোড়ে অবিলম্বে স্থায়ী ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ার দাবি তুলে অবরোধ করেন বাসিন্দারা। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে পুলিশের আশ্বাসে বিক্ষোভ ওঠে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রোজকার মতো এ দিন সকালে ছেলে বিশালকে সাইকেলে চড়িয়ে স্কুলে পৌঁছতে বেরিয়েছিলেন ডিপিএলের কর্মী অভিসর সোরেন। তাঁরা থাকেন ডিপিএল কলোনিতে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে গ্যামন ব্রিজ মোড়ে পৌঁছে স্টেশন রোডে উঠতেই একটি লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিছন থেকে তাঁদের সাইকেলে ধাক্কা মারে। লুটিয়ে পড়েন দু’জনে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বিশালের। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আশপাশের বাসিন্দারা ছুটে আসেন। তাঁরা লরিটিকে তাড়া করলে চালক ও খালাসি পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছয় পুলিশ। অভিসরবাবুকে ডিপিএল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পুলিশ লরিটি আটক করে। চালক ও খালাসির খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে জানায় পুলিশ।
দুর্ঘটনার পরে ক্রমশ গ্যামন ব্রিজ মোড়ে এলাকাবাসীর ভিড় বাড়তে থাকে। এক সময়ে বাসিন্দারা অবরোধ শুরু করেন। ফলে, সাত সকালে স্টেশন রোডে যানজট শুরু হয়। ট্রেন ধরার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে মাঝপথে বিপাকে পড়েন অনেকে। বাসিন্দাদের দাবি, ওই মোড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। গত এক বছরে এমন বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাণহানিও হয়েছে। এর আগেও নানা সময়ে রাস্তা অবরোধ করে মোড়ে স্থায়ী ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরির দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা। এ দিনও একই দাবি জানাতে থাকেন তাঁরা। পুলিশ সমস্যা মেটাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে শেষমেশ বিক্ষোভ থামে। পুলিশ জানায়, এ দিনই প্রাথমিক ভাবে ওই মোড়ে অস্থায়ী ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে তোলার আর্জি জানানো হবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে।
দুর্ঘটনার খবর আসতেই শোকের ছায়া নেমে আসে ডিপিএল কলোনিতে। বাসিন্দারা জানান, ব্যস্ত স্টেশন রোড দিয়েই বিভিন্ন স্কুলে যেতে হয় শহরের অনেক পড়ুয়াকে। সকালের দিকে ওই রাস্তায় মিনিবাস, বড়বাস, মোটরবাইক, গাড়ি থেকে শুরু করে রিকশা, সাইকেল, পথচারীদের তুমুল ভিড় লেগেই থাকে। তার উপরে পাশেই রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর শিল্পাঞ্চল। সেখানকার মালবাহী লরিগুলি হ্যানিম্যান সরণি দিয়ে যাতায়াত করে গ্যামন ব্রিজ মোড়েই স্টেশন রোডে ওঠে। তাই ওই মোড় কার্যত সদাব্যস্ত থাকে। স্থায়ী ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে না তুললে আরও অনেক দুর্ঘটনা ঘটবে বলে আশঙ্কা বাসিন্দাদের।
পরিবারের সবার ছোট ছিল বিশাল। তার আগে পাঁচ দিদি ও এক দাদা। এ দিন দুপুরে ডিপিএল কলোনিতে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা মনোকি সোরেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। তাঁকে তখনও পরিষ্কার করে কেউ কিছু জানাননি। কিন্তু খারাপ কিছু ঘটেছে আঁচ করে তিনি ভেঙে পড়েছেন। ছটফটে বিশাল আর কোনও দিন ফিরবে না, এ কথা বিশ্বাস করতে পারছেন না পাড়ার কেউই।