প্রতি রাতে তিনি পঞ্চাশেরও বেশি রাস্তার কুকুরকে খাওয়ান। নিজস্ব চিত্র।
লকডাউন কি আনলক। বারোমাসে একদিনও বাদ যায় না। সারাবছরই দায়িত্ব পালন করেন পূর্ব বর্ধমানের ভাতার বাজারের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ রায়। রাত সাড়ে ৮টা বাজতেই তিনি বেড়িয়ে পড়েন স্কুটি নিয়ে। সঙ্গে থাকে বড় বালতি, একটি বড় হাতা।
পশুপ্রেমী বিশ্বজিৎ বাড়ি থেকে বের হয়েই ডাক ছাড়েন তাঁর পথ-পোষ্যদের জন্য। তাঁর গলায় ডাক শুনেই অলিগলির ফাঁকফোকর থেকে দলে দলে বেরিয়ে পড়ে সারমেয়র দল। তারা সামনে আসতেই বিশ্বজিৎবাবু বালতি থেকে মাংসের ঝোল মেশানো ভাত তুলে তুলে প্রত্যেকের সামনে সমান ভাগে ভাগ করে দেন। মাংস-ভাত পেয়ে সারমেয়র দল তখন আনন্দে আটখানা।
এ ভাবেই প্রতি রাতে ভাতার বাজার এলাকায় পঞ্চাশেরও বেশি রাস্তার কুকুরকে খাওয়ান বিশ্বজিৎ। জানালেন, ‘‘রোজ ৬ কেজি চাল রান্না করা হয়। সঙ্গে থাকে দেড় কেজি মুরগির মাংস।’’ তাঁর আতিথেয়তায় কুকুরের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে।
আরও পড়ুন: প্রবল ঠান্ডায় ক্ষতির আশঙ্কা ধান চাষে
ভাতার বাজারে সন্তোষসায়রের কাছে বর্ধমান কাটোয়া রাজ্যসড়কের ধারেই বাড়ি বিশ্বজিৎ রায়ের। পেশায় ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎবাবুর বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী। তাঁদের একমাত্র ছেলে বাইরে পড়াশোনা করেন। শুধু পঞ্চাশোর্ধ বিশ্বজিৎই নন, টুম্পাদেবীকেও এলাকার বাসিন্দারা চেনেন একজন পশুপ্রেমী হিসাবে। স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ হাজরা বললেন, ‘‘টুম্পাদেবী বাজারে বার হয়ে রাস্তায় কোথাও কুকুরকে অসুস্থ অবস্থায় দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। শত কাজ ফেলেও তিনি আগে নিরীহ চতুষ্পদটির খেয়াল রাখেন।’’
রায়দম্পতির বাড়িতেও পোষা কুকুর রয়েছে বেশ কয়েকটি। পাশাপাশি, ভাতার বাজারের পথের কুকুরদের খাওয়ানোর কাজ নীরবে করে যাচ্ছেন তাঁরা।
বিশ্বজিৎ রায় জানালেন, " আমি ছোট থেকেই কুকুর ভালবাসি। বাড়িতে কুকুর পুষতাম। তবে রাস্তার কুকুরদের জন্য খাওয়ানোর ব্যবস্থা আমার স্ত্রীর আবদারেই শুরু করতে হয়েছে। রোজ রাতে একবার করেই খেতে দিই। ঈশ্বরের কৃপায় আমাদের অভাব হয়নি। যতদিন পারব এটা চালিয়ে যাব।’’
আরও জানালেন, প্রথমদিকে কয়েকদিন কুকুরগুলোকে খিচুড়ি খেতে দিয়েছিলেন। কিন্তু দেখেছেন ওরা আদৌ খিচুড়ি পছন্দ করে না। তাই পরিবর্তে মাংসভাতের বন্দোবস্ত।
আরও পড়ুন: পানীয় জলের দাবিতে বিক্ষোভ
স্থানীয় বাসিন্দা রতন রায় জানালেন, ‘‘রাত সাড়ে আটটা বাজতেই এই পশুপ্রেমী খাবারের বালতি নিয়ে স্কুটিতে চড়ে বেড়িয়ে পড়েন। বাড়ির সামনে কয়েকটি কুকুরকে খেতে দিয়ে কিছু দূরে ভাতার হাউসিং গেটের সামনে থামেন। তারপর নসিগ্রাম মোড় হয়ে রেলগেটের কাছে শনিমন্দির চত্বরে দাঁড়ান। শেষে রেলস্টেশনের কাছে স্কুটি দাঁড় করিয়ে খাবার দেন। এই হল প্রতিরাতে তাঁর কর্মকাণ্ড।’’
তাঁর গলার আওয়াজ পেলেই পথকুকুরের দল ছুটে চলে আসে স্কুটির সামনে। তাদের খাওয়ানো শেষ হলে বাড়ি চলে যান বিশ্বজিৎ। ভাতার বাজারে রোজ রাতে কুকুরদের এই ভোজনপর্ব দেখতে অভ্যস্ত স্থানীয় বাসিন্দারা।