Petrol Pump

coronavirus in West Bengal: পেট্রল ভরেন, ভোগও রাঁধেন ভাল্কির অন্নপূর্ণা

মেয়ের পড়াশোনা, স্বামীর চিকিৎসা— সবেরই দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। সে সব সামলে এলাকার মেয়েদের স্বনির্ভর হওয়ার প্রেরণা জোগাচ্ছেন আউশগ্রামের ভাল্কির অন্নপূর্ণা অধিকারী।

Advertisement

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২১ ০৮:২৭
Share:

অন্নপূর্ণা অধিকারী। নিজস্ব চিত্র।

ভোরে বাড়ির কাজ সেরে সাইকেলে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছন পেট্রল পাম্পে। সারা দিন পাম্পে দাঁড়িয়ে গাড়ি, মোটরবাইকে পেট্রল ভরার কাজ। বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা নেমে যায়। মেয়ের পড়াশোনা, স্বামীর চিকিৎসা— সবেরই দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। সে সব সামলে এলাকার মেয়েদের স্বনির্ভর হওয়ার প্রেরণা জোগাচ্ছেন আউশগ্রামের ভাল্কির অন্নপূর্ণা অধিকারী।

Advertisement

দুর্গাপুরের আমলাজোড়ায় বাপের বাড়ি বছর পঁয়তাল্লিশের অন্নপূর্ণার। বছর কুড়ি আগে ভাল্কির উত্তম অধিকারীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের একমাত্র সন্তান উত্তরা। উত্তম একটি বেসরকারি সংস্থায় গাড়ি চালাতেন। সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু বিপদ নেমে আসে ২০১২ সাল নাগাদ।

অন্নপূর্ণা জানান, স্বামীর হৃদযন্ত্রে সমস্যা ধরা পড়ে। অস্ত্রোপচার করাতে হয়। সে সময় টানা ৫ দিন অচেতন ছিলেন স্বামী, জানান তিনি। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে অসুস্থ স্বামীর ওয়ার্ডের বাইরে দিনরাত পড়েছিলেন অন্নপূর্ণা। সে বার সুস্থ হয়ে ফিরলেও, পরে আর এক বার জীবন-মরণ সমস্যা হয় উত্তমের। এর পরে তাঁর উপার্জন কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। সংসারের হাল ধরতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে নাম লেখান অন্নপূর্ণা।

Advertisement

স্থানীয় স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নার কাজ নেন। তার সঙ্গে অন্যের বাড়িতে কাজ। কিন্তু তিনি জানান, এ ভাবে যা উপার্জন হত, তা দিয়ে স্বামীর ওষুধ, মেয়ের পড়াশোনা, সংসারের খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। বিকল্প রাস্তা খুঁজছিলেন। একটু সুস্থ হতেই উত্তম ফের অস্থায়ী ভাবে স্থানীয় দু’একটি সংস্থার গাড়ি চালানো শুরু করেন। কিন্তু লকডাউনে সে কাজও বন্ধ হয়ে যায়। তখন আবার স্কুলে মিড-ডে মিলের কাজও বন্ধ। সংসারে চরম টানাটানি শুরু হয়। বিভিন্ন জায়গায় কাজ পাওয়ার জন্য যোগাযোগ করেন অন্নপূর্ণা। তখনই একটি পেট্রল পাম্পে জ্বালানি ভরার কাজ মেলে।

গত নভেম্বরে সে কাজে যোগ দেন তিনি। গুসকরা-মানকর রাস্তায় আউশগ্রামের অভিরামপুরে ওই পাম্পে গেলেই দেখা মেলে অন্নপূর্ণার। ৯ ঘণ্টার কাজ। সকাল ৮টার মধ্যে হাজির হতে হয়। সকালে বাড়ির কাজকর্ম সেরে পৌঁছে যান তিনি। বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ চলে। তিনি জানান, কখনও কখনও সকাল ৬টার মধ্যেও হাজির হতে হয় পাম্পে। বাড়ি ফিরতে অন্ধকার নেমে যায়। অন্নপূর্ণা বলেন, ‘‘কেউ-কেউ নানা সমালোচনা করেন। কিন্তু সে সবে বিশেষ কান দিই না। কারণ, আমাদের দুর্দিনে কেউ দু’মুঠো খাবার দিয়েও সাহায্য করেনি।’’ পাম্পে কাজ নেওয়ার পরে সংসার ভালই চলছে, দাবি তাঁর।

ভাল্কিতে অধিকারী পরিবারের দুর্গাপুজো হয়। পারিবারিক সেই পুজোয় ভোগও রাঁধেন অন্নপূর্ণা। তাঁর কথায়, ‘‘দেবী দশভুজা লড়াই করার শক্তি জুগিয়েছেন। এলাকার অনেক মেয়েই নানা সমস্যায় ভোগেন। তাঁদেরও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা বলি।’’
পুজোর দিনগুলিতে অবশ্য আনন্দ করার বিশেষ সুযোগ নেই তাঁর। কারণ তখনও তাঁকে কাজে যেতে হবে, জানান তিনি। তাঁর সহকর্মী জয়দেব হেমব্রম, সদানন্দ বাগ, রাকেশ রুইদাসেরা বলেন, ‘‘খুব নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন অন্নপূর্ণা দিদি।’’ ওই পেট্রল পাম্পের মালিক মনোজ করের দাবি, ‘‘পূর্ব বর্ধমান জেলায় পেট্রল পাম্পগুলিতে অন্নপূর্ণাই একমাত্র মহিলা কর্মী।’’

উত্তম বলেন, ‘‘আমার অসুস্থতা ও লকডাউন, জোড়া ধাক্কা সামলে খুব পরিশ্রম করে অন্নপূর্ণা সংসারের হাল ধরে রেখেছে।’’ তাঁদের মেয়ে, গুসকরা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী উত্তরা বলেন, “গান, পড়াশোনা মায়ের জন্যই চালিয়ে যেতে পারছি। আমার কাছে মা প্রকৃত অর্থেই অন্নপূর্ণা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement