প্রতীকী ছবি।
দীর্ঘদিন আগে অনুমোদন হলেও বাড়ি-বাড়ি জল সরবরাহ প্রকল্প এখনও শেষ হয়নি বর্ধমান শহরে। সমস্যা কী নিয়ে— খোঁজ নিল আনন্দবাজার।
কেন্দ্রের ‘অমরুত’ প্রকল্পে বর্ধমান শহরে বাড়ি-বাড়ি জল সরবরাহে প্রশ্ন উঠেছিল দামোদর থেকে জল তোলার পদ্ধতি নিয়ে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে পদ্ধতি বদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর জেরে যেমন প্রকল্প রূপায়ণ বিলম্বিত হচ্ছে, পাইপলাইন পাতার কাজে আরও কিছু জট রয়েছে বলে পুরসভা ও মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেট (এমইডি) সূত্রে খবর।
এমইডি ও পুরসভা সূত্রে জানা যায়, রাস্তার বড় অংশ হকারদের দখলে রয়েছে। তাঁদের সেখান থেকে না তুলে পাইপলাইন বসানোর কাজ করা যাচ্ছে না। আবার, পূর্ত দফতরের অধীনে থাকা বিসি রোডের মাঝ বরাবর পাইপ বসাতে হবে এমইডিকে। বিসি রোড ছাড়া, পূর্ত দফতরের জিটি রোড, কাছারি রোড-সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা কাটতে হবে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন, পূর্ত দফতর, পুরসভা, এমইডি এবং বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়কের মধ্যে বৈঠক হয়। সেখানে অনেকটা জট কেটেছে বলে দাবি।
তবে এখনও সেচ দফতর, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ও রেলের অনুমতি আটকে থাকায় পাইপ বসানোর কাজ আটকে রয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। বাঁকা নদীর উপরে সাতটি সেতু তৈরি করে পাইপ নিয়ে যেতে হবে। শহরের এক দিকে, রয়েছে রেললাইন, অন্য দিকে, রয়েছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে। সর্বত্র পানীয় জল সরবরাহ করতে গেলে রেল ও জাতীয় সড়ক টপকে পাইপলাইন নিয়ে যেতে হবে। পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই সব বিভাগে অনুমতির জন্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’
এত কিছু পরেও জলের জোগান নিয়ে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারদের। তাঁদের দাবি, ‘ইনফিলট্রেশন গ্যালারি’র মাধ্যমে জলের জোগান রাখতে গেলে, নদীতে পর্যাপ্ত বালি থাকতে হবে। তা না হলে জলের সঙ্কট দেখা দেবে। সে জন্য জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এক বৈঠকে এমইডি-র তরফে জানানো হয়েছে, পুরুলিয়া শহরে কংসাবতী থেকে এই পদ্ধতিতে জল সরবরাহ হয়। কিন্তু সেখানে তেলেডি ঘাট এলাকা থেকে বালি তোলার কারণে জলের উৎস শুকিয়ে যাচ্ছিল। বর্ধমানের ইদিলপুর, জুজুটি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় বালির খাদান রয়েছে। নির্বিচারে বালি তুললে ২৮০ কোটি টাকার এই প্রকল্প সফল হবে কি না, সে প্রশ্ন থাকছেই। বৈঠকে প্রশাসনের তরফে অবশ্য আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, প্রকল্পের কাজ শুরু হলেই খাদানগুলি বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে খাদানের ইজারাদারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও ভাবা হবে।
বিধায়ক (বর্ধমান দক্ষিণ) খোকন দাসের বক্তব্য, ‘‘সুষ্ঠু ভাবে পানীয় জল সরবরাহের জন্য যে সব জট রয়েছে, তা কাটানোর চেষ্টা করছি।’’ এমইডি-র পশ্চিমাঞ্চলের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার কিংশুক রায়ের দাবি, ‘‘এক বছরের মধ্যে বাড়ি-বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দিতে পারব বলে আশা করছি।’’