কাটোয়ার রবীন্দ্র ভবন। নিজস্ব চিত্র
নিয়মিত সংস্কৃতি চর্চার জন্য রবীন্দ্র ভবন সংস্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন শহরের সংস্কৃতিপ্রেমীরা। কিন্তু অনেক দিন ধরে পূর্ণ সংস্কারের কোনও উদ্যোগ না হওয়ায় বেহাল ভবনেই অনুষ্ঠান করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ শিল্পীদের। মঞ্চের দুর্দশা জেনে বড় অনুষ্ঠান করতে রাজি হন না অনেকে। দাঁইহাটের একমাত্র সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র টাউন হলের হালও ভাল নয়।
১৯৬১ সালে স্থানীয় বাসিন্দা কালিকাপ্রসাদ রায়চৌধুরীর দান করা জায়গায় সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক। তার পরের বছর রবীন্দ্র ভবনটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন মন্ত্রী প্রফুল্ল সেন। ১৯৮১ সালে এক বার ভবন সম্প্রসারণ হয়। এর পরে দীর্ঘ দিন কোনও সংস্কার হয়নি। বছর তিনেক আগে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের প্রায় ৮ লক্ষ টাকা অনুদানে কিছু কাজ হলেও হাল ফেরেনি রবীন্দ্র ভবনের।
শিল্পীরা জানান, সংস্কারের অভাবে ঢালু প্রেক্ষাগৃহের মেঝে ভেঙে ইট বেরিয়েছে, ছোট মঞ্চের কাঠও দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্লাস্টিকের তৈরি দর্শকাসন ভেঙে গেছে। সাজসজ্জার জন্য কোনও গ্রিনরুম নেই। রবীন্দ্র পরিষদের কার্যালয়ের ছোট ঘরেই শিল্পীদের সাজপোশাক সারতে হয়। নেই মঞ্চের বড় পর্দা, মহিলাদের পৃথক শৌচালয়। স্থায়ী শব্দ-ব্যবস্থা নেই। গত জুনে মহকুমা প্রশাসনকে রবীন্দ্র ভবনের সংস্কারের জন্য আবেদন করেন রবীন্দ্র পরিষদের সম্পাদক তুষার পণ্ডিত। তুষারবাবু বলেন, ‘‘গরমে অনুষ্ঠান চালানোর জন্য পুরো প্রেক্ষাগৃহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা দরকার। ২৮০টি কাঠের আরামদায়ক চেয়ার বসানো প্রয়োজন। সঙ্গে দোতলায় একটি ঘর তৈরি করে ভাড়া দিলে বছরভর ভবনের খরচ চালানো সহজ হবে।’’
সারা বছর নানা সাংস্কৃতিক অনু্ঠানের পাশাপাশি আলোচনাসভা, সংবর্ধনার মতো নানা কর্মসূতি হয় এখানে। এ ছাড়া সপ্তাহভর ভবনের দু’টি ঘরে নাচ, গান, আবৃত্তি, অঙ্কন, তবলা ও আলোকচিত্র চর্চাকেন্দ্র চলে। রবীন্দ্র পরিষদ সূত্রে জানা যায়, অনুষ্ঠান থাকলে হল ভাড়া বাবদ আয় ও বছরভর শিক্ষার্থীদের দেওয়া বেতনের সামান্য অংশ পায় পরিষদ কমিটি।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আবেদন পেয়ে পূর্ত দফতরে বিষয়টি জানানো হয়। পরিদর্শনের পরে পূর্ত দফতরের কাটোয়া ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘প্রেক্ষাগৃহে ১৮টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, আলো, সিসি ক্যামেরা, আরামদায়ক চেয়ার বসানো-সহ বেশ কিছু পরিকল্পনা হয়েছে।’’ তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর বরাদ্দ মঞ্জুর করলে সেগুলির কাজ ও ভবনের দোতলায় ছাউনি দেওয়া একটি ঘর তৈরি সম্ভব বলে জানান তিনি।
দাঁইহাট টাউন হলেও দেওয়াল ভাঙা, রঙ উঠে গিয়েছে। ভাঙাচোরা আসনগুলি বসার উপযুক্ত নেই। পর্যাপ্ত আলো ও শব্দের ব্যবস্থার অভাবে এই হলেও অনুষ্ঠান করতে রাজি হন না শিল্পীদের একাংশ। স্থানীয় নৃত্যশিল্পী মৌশ্রী চন্দ্র বলেন, ‘‘হলে সাজঘর ও শৌচালয়ের বিশেষ প্রয়োজন।’’ দাঁইহাটের পুরপ্রধান শিশির মণ্ডল বলেন, ‘‘হল সংস্কারে ৫ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার কাজের পরিকল্পনা তৈরি করেছে পুরসভা। প্রথম ধাপে ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার প্রকল্প পাঠানো হয়েছ পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।’’ (শেষ)