পত্রিকার কাজে ব্যস্ত ক্লাবের সদস্যেরা। নিজস্ব চিত্র
স্বাধীনতার সময় থেকে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন হাতে লেখা সাহিত্য পত্রিকা বার করেন তাঁরা। এ বছরও গত তিন মাস ধরে সে কাজ চলছে। রায়নার ওই ক্লাবের সদস্যদের দাবি, কবিশেখর কালিদাস রায়, কুমুদরঞ্জন মল্লিক থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের হাতে লেখা কবিতা-প্রবন্ধ রয়েছে তাঁদের কাছে। সেগুলি সংরক্ষণ করার জন্যও জেলাশাসকের কাছে আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা।
রায়নার আনগুনা গ্রামে দুর্গাপুজোর চেয়ে জাঁকজমক বেশি লক্ষ্মীপুজোয়। প্রতিটি বাড়ি তো বটেই, বারোয়ারি পুজোতেও মেতে ওঠেন আবালবৃদ্ধবনিতা। গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, কর্মসূত্রে অনেকেই বাইরে থাকেন। লক্ষ্মীপুজোয় ঘরে ফেরেন সবাই। গ্রামের সবাইকে সাক্ষী রেখেই প্রকাশিত হয় ‘প্রভাতী সাহিত্য পত্রিকা’। কাল, রবিবার বিকেলেও দু’শোর বেশি পাতার ওই পত্রিকার ৭৩তম সংখ্যা প্রকাশ হওয়ার কথা।
ক্লাবের এক কর্তা উদয় নায়েক বলেন, “স্বাধীনতার বছর থেকে আমরা হাতে লেখা সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করি। কাজী নজরুল ইসলাম, কবিশেখর কালিদাস রায়, সত্যজিৎ রায়ের হাতের লেখা রয়েছে আমাদের কাছে। অমূল্য লেখাগুলি সংরক্ষণ করা খুবই প্রয়োজন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেওয়া গ্রামের ১২ জন যুবক ওই পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। ছাপাখানায় যাওয়ার যথেষ্ট সুবিধা থাকা সত্ত্বেও আমরা সেই ঐতিহ্য নষ্ট করিনি। আমাদের দেখে নতুন প্রজন্মও ঐতিহ্য ধরে রাখতে সচেষ্ট।’’
পত্রিকা প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত অমিত রায় জানান, তাঁদের একটি দল রয়েছে। লেখা নির্বাচনের পরে নির্দিষ্ট মাপে রঙিন আর্ট পেপার কাটা হয়। তারপরে পাণ্ডুলিপি থেকে লেখাগুলি পত্রিকার পাতায় হাতে লেখেন তাঁরা। পত্রিকার পুরনো সংখ্যাগুলিও রয়েছে ক্লাবের আলমারিতে। অবিন্যস্ত ও অবৈজ্ঞানিক ভাবে রাখা ওই সব পত্রিকাগুলি সংরক্ষণ করতে চান ক্লাবের সদস্যরা। তাঁরা বলেন, “মুদ্রণ শিল্পের দিন দিন উন্নতি ঘটছে, কিন্তু হাতে লেখা সাহিত্য পত্রিকার আভিজাত্যই আলাদা। শুধু একটি পত্রিকা আমাদের গ্রামকে অনন্য করে তুলেছে।’’ খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীও।