Asansol

Asansol Waterlogging: আসানসোল ডুবু ডুবু, রানিগঞ্জ ভেসে যায়, জলের তোড়ে উধাও রাস্তা, নামল সেনা

রানিগঞ্জের কাছে জলের তোড়ে রাস্তার একাংশ ভেঙে স্রেফ ধুয়ে গিয়েছে। সেখান দিয়ে এখন বিপুল তোড়ে জল বইছে। ট্রেন চলাচলও বন্ধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:২৫
Share:

বৃষ্টিতে জলমগ্ন আসানসোল। —নিজস্ব চিত্র।

গোটা শহরটা জলে ভাসছে। রাস্তায় জল। বাড়ির ভিতরে জল। এমনকি কোথাও কোথাও ঘরের ভিতরেও জল ঢুকে পড়েছে। এমনই অবস্থা শিল্প শহর আসানসোলের। শুধু শহর নয়, পশ্চিম বর্ধমান জেলার একটা বড় অংশই প্রবল বর্ষণের জেরে বিপর্যস্ত। রানিগঞ্জের কাছে জলের তোড়ে রাস্তার একাংশ ভেঙে স্রেফ ধুয়ে গিয়েছে। সেখান দিয়ে এখন বিপুল তোড়ে জল বইছে। ফলে মহাবীর কোলিয়ারি এলাকার বাইপাস রাস্তা এখন অচল হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া দফতরের হিসাব বলছে, আসানসোলে দু’দিনের টানা বৃষ্টি আগের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। উদ্ধারকার্যে ইতিমধ্যেই নামানো হয়েছে সেনা। কালিপাহাড়ি ও নিমচার মধ্যে ট্রেন চলাচলও আপাতত বন্ধ। নানা ঘটনায় চার জনের মৃত্যুও হয়েছে আসানসোলে।

Advertisement

আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত আসানসোলে বৃষ্টি হয়েছে ৪৩৪ মিলিমিটার। যা সর্বকালীন রেকর্ড বলেও জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। আবহবিদদের দাবি, এর আগে ২০১৮ সালে আসানসোলে বৃষ্টি হয়েছিল ১৯২ মিলিমিটার, যা এত দিন রেকর্ড ছিল। টানা বৃষ্টিতে আসানসোল শিল্পাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকাই জলের তলায়। আসানসোলের রেলপাড়, দিলদারনগর, চেলিডাঙা, নিয়ামতপুর, রানিগঞ্জ, বার্নপুর-সহ বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন। জল ঢুকেছে বহু বাড়িতেও। শিল্পাঞ্চলের মধ্যে দিয়ে গাড়ুই এবং নুনিয়া নামে দু’টি নদী বয়ে গিয়েছে। সেই দুই নদীও বিপদসীমার উপরে। নদীর জলে বিস্তীর্ণ এলাকা এখন জলমগ্ন। এর উপর দুর্গাপুরের বাঁধ থেকে জল ছাড়ায় বিপদ আরও বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অতীতে বহু বার প্রশাসনকে জানানো সত্ত্বেও নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটেনি। তাঁর জেরে এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অনেকেরই মত। জলমগ্ন আসানসোল নিয়ে পুরসভার প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ডিভিসি যখন তখন জল ছাড়ছে। তার জেরেই এমন ঘটনা ঘটছে। টানা তিন দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া নদীর ধারও দখল হয়ে গিয়েছে। তার জেরে জল নিকাশে সমস্যা হচ্ছে।’’

রানিগঞ্জে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের সংযোগকারী বাইপাস রাস্তাটি গির্জা পাড়ার বাদামবাগান এলাকা দিয়ে রানিসায়ের মোড়ের কাছে উঠছে। সেই রাস্তার মাঝে পুরণমল কলিয়ারির কাছে একটি কালভার্ট ধসে পড়েছে। ফলে বাইপাসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে কালভার্টের উপর মাটি সরে গিয়েই বিপত্তি বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

জল জমেছে রেললাইনেও। জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। তার জেরে কালিপাহাড়ি এবং নিমচার মধ্যে চারটি লাইন দিয়েই ট্রেন চলাচল আপাতত বন্ধ রয়েছে। কিছু ট্রেনের পথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রানিগঞ্জে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং দু’নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে সংযোগকারী রানিগঞ্জ বাইপাস রাস্তায় একটি কালভার্ট ধসে পড়েছে। মুষলধারায় বৃষ্টিতে কালভার্টের মাটি সরে গিয়ে এই বিপত্তি ঘটে। ওই রাস্তা দিয়ে প্রত্যহ কয়েক হাজার পণ্যবাহী যানবাহন যাতায়াত করের কালভার্ট ভেঙে যাওয়ায় সেই পরিবহণে কোপ পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত চারটি পৃথক ঘটনায় এক বৃদ্ধা-সহ চার জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে আসানসোল উত্তর থানার রেলপাড় এলাকায় বাড়িতে জল ঢুকে ঘুমের মধ্যে এক যুবকের মৃত্যু হয়। মৃত যুবকের নাম নাসিম আনসারি (২৫)। বুধবার রাতে বাড়ির লোকেদের সঙ্গে ঘরে শুয়েছিল নাসিম। রাতে তার বাড়িতে জল ঢুকতে শুরু করে। তখন সকলে বাইরে বেরিয়ে গেলেও নাসিম বেরোতে পারেনি। বৃহস্পতিবার ঘরে তার দেহ উদ্ধার হয়। আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্নপুরের রিভারসাইড টাউনশিপ কলোনি এবং বারাবনি থানার জামগ্রামের কাশীডাঙায় দেওয়াল চাপা পড়ে অনিল কেওড়া (৫০) এবং সুকুরমনি বেসরা (৬৫) নামে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আসানসোলের বরাচকের তেলিপাড়ায় তপন সেন (৫৫) ইটভাটার এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement