Sit in Protest

নিলাম-সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বার থেকে বেসরকারি সংস্থাগুলি বাজারে বাণিজ্যিক ভাবে কয়লা বিক্রি করতে পারবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২০ ০৩:৫৪
Share:

আসানসোলের রবীন্দ্র ভবন চত্বরে অবস্থান-বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছিল, বাণিজ্যিক ভাবে কয়লা উত্তোলনের জন্য বেসরকারি উদ্যোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ৫০টি ‘কয়লা ব্লক’ বেসরকারি সংস্থাকে নিলাম করা হবে। এই সিদ্ধান্তের কথা সামনে আসতেই সরব হয় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলি। পূর্ব ঘোষণা মতো শুক্রবার পাঁচটি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনের তৈরি ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’ আসানসোলের রবীন্দ্র ভবন চত্বরে সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে অবস্থান-বিক্ষোভের কর্মসূচি নেয়। তবে সেখানে দেখা যায়নি বিএমএস নেতৃত্বকে।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বার থেকে বেসরকারি সংস্থাগুলি বাজারে বাণিজ্যিক ভাবে কয়লা বিক্রি করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে উৎপাদিত কয়লা বিক্রি করে যে আয় হবে, তার একটা অংশ পাবে কেন্দ্র (‘রেভিনিউ শেয়ারিং’)। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয় এআইটিইউসি, আনএনটিইউসি, এইচএমএস, সিটু ও বিএমএস, এই পাঁচটি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনের তৈরি কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক তথা এআইটিইউসি-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভাপতি রামচন্দ্র সিংহ এ দিন বলেন, ‘‘লকডাউন উঠলেই শ্রমিক আন্দোলন চরমে উঠবে। সেটা না হলে এই সিদ্ধান্তের সরাসরি অভিঘাত তৈরি হবে ইসিএলের উপরে।’’ পাশাপাশি, শ্রমিক সংগঠনগুলি জানায়, ইতিমধ্যে ইসিএলের ১৬টি খনি থেকে বেসরকারি ঠিকা সংস্থার মাধ্যমে কয়লা তোলা হচ্ছে। আরও প্রায় ১০টি খনি বন্ধ করার বিজ্ঞপ্তি জাড়ি হয়েছে। ভূগর্ভে বহু কয়লা মজুত থাকা সত্ত্বেও বন্ধ করা হয়েছে সোদপুর এরিয়ার মাউথডিহি খনিকে।

এ দিনের অবস্থান-বিক্ষোভে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সভার (বিএমএস) নেতৃত্বকে দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে বিএমএস-এর ইসিএল ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক বিনোদ সিংহ বলেন, ‘‘আমরা প্রকাশ্য অবস্থান-বিক্ষোভে যাব না, সেটা আগেই জানিয়েছিলাম। ইতিমধ্যেই কয়লামন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর কাছে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে আমাদের আপত্তির কথা জানিয়েছি।’’

Advertisement

শুক্রবার কমিটির নেতৃত্ব জানান, জেলাশাসকের (পশ্চিম বর্ধমান) মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতরে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদপত্র দেওয়ারও কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। তবে এ দিন কার্যালয়ে জেলাশাসক না থাকায় অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রশান্ত মণ্ডলের কাছে প্রতিবাদপত্রটি দেওয়া হয়। প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী ওই প্রতিবাদপত্র যথা স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’

এ দিনের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া আইএনটিইউসি নেতা চণ্ডী বন্দ্যোপাধ্যায়, সিটু প্রভাবিত সিএমএসআই-এর সাধারণ সম্পাদক বিবেক চৌধুরী, এইচএমএস, ইউটিইউসি ও টিইউসিসি-র নেতৃত্ব দাবি করেন, কয়লাক্ষেত্রের রাষ্ট্রায়ত্তকরণের পরে, সার্বিক ভাবে শ্রমিকদের উন্নতি হয়েছে। এখন, এই সিদ্ধান্তের ফলে, শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরীর আশঙ্কা, ‘‘এত দিন শুধু অলাভজনক খনিগুলিকেই বেসরকারি মালিকানার হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ বার রাজমহল, ঝাঁঝড়া, সোনপুরবাজারির মতো বিপুল লাভজনক খনিগুলিতেও বেসরকারি মালিকানার তত্ত্বাবধানে কয়লা তোলার কথা শোনা যাচ্ছে।’’

পাশাপাশি, ইসিএলের সাতগ্রাম এরিয়ার চাপুইখাস কোলিয়ারি, সাতগ্রাম ইনক্লাইন, সাতগ্রাম প্রজেক্ট ও জেকে নগর কোলিয়ারি সামনে কমিটির নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখানো হয়।

তবে শ্রমিক সংগঠনগুলির এই ধারণা ‘অমূলক’ আখ্যা দিয়ে কয়লা মন্ত্রকের একটি বিবৃতি উদ্ধৃত করে ইসিএল কর্তৃপক্ষ একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, কয়লা শিল্পের ‘বেসরকারিকরণ’-এর কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। উল্টে ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কয়লা শিল্পকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে একশো কোটি টন কয়লা তোলা হবে। সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রক কোল ইন্ডিয়াকে ১৬টি নতুন ‘কয়লা ব্লক’ও দিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement