প্রতীকী ছবি।
দিদি বৃহন্নলা হওয়ায় চাপের মুখে ছাড়তে হয়েছে শ্বশুরবাড়ি— এমনই অভিযোগে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কালনার এক বধূ। দিদির সামাজিক স্বীকৃতি ও সসম্মানে নিজে যাতে শ্বশুরবাড়িতে ফিরতে পারেন, সে আর্জিও জানিয়েছিলেন। বৃথা গেল না সে আবেদন।
মহকুমাশাসকের (কালনা) দফতরে সোমবার ভুল স্বীকার করে নিলেন ওই তরুণীর স্বামী-শাশুড়ি। বধূটিকে সসম্মানে ঘরে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না—এমন মুচলেকাও দিলেন তাঁরা। তরুণী জানান, আজ, মঙ্গলবার হুগলিতে শ্বশুরবাড়ি ফিরে যাবেন তিনি। তবে ভবিষ্যতে এমন কিছু ঘটলে ফের প্রশাসনের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানিয়েছেন। তাঁর দিদি বলেন, ‘‘বোন এ বার শান্তিতে সংসার করবে। আমি নিশ্চিন্ত।’’
২০১৬-র জুলাইয়ে দেখাশোনা করে হুগলির ত্রিবেণীতে বিয়ে হয়েছিল ওই তরুণীর। তাঁর পরিবারের দাবি, বিয়ের আগে পাত্রপক্ষকে ‘বড়দির কথা’ খুলে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের মাস পাঁচেক পর থেকেই সমস্যা শুরু হয়। ওই তরুণীর দাবি, বৃহন্নলা দিদির সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার জন্য জোর করা হয়। দিদি শ্বশুরবাড়িতে গেলে তা নিয়ে অশান্তি বাধে। এমনকী, দিদির সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে না চাওয়ায় তাঁকেও বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। এর পরেই রাজ্য মানবাধিকার মিশন, জাতীয় মহিলা কমিশন ও মহকুমা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন বধূটি। দু’পক্ষকে সামনাসামনি বসিয়ে মিটমাটে উদ্যোগী হন মহকুমাশাসক (কালনা) নিতীন সিংহানিয়া।
হুগলি থেকে এ দিন সকালে কালনায় আসেন ওই তরুণীর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি। মহকুমাশাসকের সঙ্গে কথাবার্তার পরে ওই তরুণীর স্বামী বলেন, ‘‘ভুল বুঝতে পেরেছি। স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে নতুন করে সব কিছু শুরু করতে চাই।’’ বৃদ্ধা শাশুড়িও মহকুমাশাসকের কাছে জোড়হাতে ক্ষমা চেয়ে নেন। তরুণীর ‘বড়দি’কে বৃহন্নলাদের জন্য সরকারের তরফে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, বিভিন্ন সামাজিক কাজে তাঁদের কী ভাবে সামিল করার চেষ্টা হচ্ছে তা জানান প্রশাসনিক কর্তারা।
মহকুমাশাসক পরে বলেন, ‘‘বৃহন্নলা দিদিকে নিয়ে শাশুড়ি নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন এবং হেনস্থা করতেন বলে অভিযোগ ছিল বধূটির। মা-কে বাধা দেননি তাঁর স্বামী। ফলে, বাধ্য হয়ে শ্বশুরবাড়ি ছাড়তে হয়েছিল বধূকে। আশা করা যায়, প্রশাসন বোঝানোর পরে ওঁর ফিরে যাওয়া সুখের হবে।’’ তবে ‘ট্রান্সজেন্ডার ওয়েলফেয়ার বোর্ড’-এর সদস্য রঞ্জিতা সিংহ বলেন, ‘‘প্রশাসনের চাপে শ্বশুরবাড়ি মেয়েটিকে ফেরত নিলে সমস্যা ফের মাথা চাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গের সমস্যা বুঝে, দিদির জন্য ছোট বোনের লড়াইকে সম্মান জানিয়ে যদি মেয়েটিকে ফিরিয়ে নেওয়া হয় তা হলে এই উদ্যোগকে স্বাগত।’’
মহকুমাশাসকের দফতর থেকে বেরিয়ে ছোট বোনের শাশুড়ির সঙ্গে হেসে কথা বলতে দেখা যায় বধূটির ‘বড়দি’কে। বধূটি বলেন, ‘‘শ্বশুরবাড়িতে ফেরার পরের শুরুটা যেন অন্য রকম হয়।’’