এ ভাবেই বইছে নদী। নিজস্ব চিত্র
নদী বাঁচাতে নানা প্রকল্প চালু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তার পরেও সব ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ জামুড়িয়া ও অন্ডালের নানা গ্রামের বাসিন্দাদের। তাঁরা জানান, দৈনন্দিন কাজের অন্যতম ভরসা, সিঙ্গারন নদী। দূষণে সেই নদীই বিপন্ন বলে তাঁদের অভিযোগ। নদীর জল ব্যবহার করতে পারছেন না জামুড়িয়া শিল্পতালুক লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারাও।
বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ইকড়া, শেখপুর, ধসল, তপসিগ্রাম লাগোয়া এলাকায় নদীর ধারে তৈরি হওয়া অন্তত ১৪টি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা থেকেই মূলত ছড়াচ্ছে দূষণ। কী ভাবে? পরিবেশপ্রেমীদের দাবি, কারখানাগুলি রাস্তার দূষণ এড়াতে নদীর জল পাম্পের মাধ্যমে তুলে তা রাস্তায় ছড়ায়। তা ছাড়া প্রতিটি কারখানা বর্জ্য ও রাসায়নিক সামগ্রী নদীতে ফেলছে বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, তা জমে নদীর নাব্যতা এবং স্বাভাবিক গতিপথেও প্রভাব পড়ছে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, নদীর নানা জায়গায় ‘ব্যারিকেড’ বানিয়ে ‘বোরহোল’ তৈরি করে জল তুলছে কারখানাগুলি। এমনকী, ইকড়ার অদূরে নীলবনের কাছে নদীতে মাটি ও কারখানার ছাই ফেলে নদীর উপরে দু’টি অস্থায়ী রাস্তা বানানো হয়েছে। এর ফলে নদীর গতিপথে প্রভাব পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ইকড়া থেকে তপসিতে নদীর জলের রং লাল হয়ে গিয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, অবস্থা এমনই যে, নদীর জল গবাদি পশুরাও পান করতে পারছে না। নদীতে স্নান করলে চর্মরোগ হওয়াও দ্বস্তুর বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। শুধু তাই নয়, অনিয়ন্ত্রিত ভাবে জল তোলার ফলে লাগোয়া গ্রামের পুকুর, কুয়োর জলস্তর কমে গিয়েছে। ইকড়ার একাংশে রবি চাষ বন্ধ। ইকড়া, মহিশাবুড়ি, তপসির শ্মশান যাত্রীরা শবদাহ করার পরে নদীর জল ব্যবহার করতে পারেন না। নদীর ধারে নীলবন পর্যন্ত শীতকালে পিকনিক বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুশীল চট্টোপাধ্যায়, বুড়ো চট্টোপাধ্যায়, শান্তি মণ্ডলদের ক্ষোভ, ‘‘ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে বারবার বিষয়টি নিয়ে তদ্বির করেও লাভ হয়নি।’’ এলাকার বাসিন্দা তরুণ চক্রবর্তী ইতিমধ্যেই নদী বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। বিডিও (জামুড়িয়া) অনুপম চক্রবর্তীর অবশ্য আশ্বাস, ‘‘নদীটি নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’