প্রকল্পের সময়সীমা পার
Jalajiban campaign

গ্রামে জল মেলেনি বাড়িতে

পিএইচই সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ছ’শো কোটি টাকার প্রকল্পে জেলায় ২ লক্ষ ৮৫টি পরিবারে গৃহ-সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় দু’লক্ষ পরিবারে সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৫
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কেন্দ্রের ‘জলজীবন মিশন’ এবং রাজ্যের ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পের অধীনে পশ্চিম বর্ধমানের ৬৭টি পঞ্চায়েতে পানীয় জলের গৃহ-সংযোগ দেওয়ার কথা ঠিক করেছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু প্রশাসন সূত্রেই জানা যাচ্ছে, ২০২২-এর মধ্যে প্রকল্প শেষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও, এখনও তা শেষ হয়নি। এমনকি, ছ’টি ব্লকে কাজের গণ্ডি ৫০ শতাংশও ছুঁতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা আগামী গ্রীষ্মের আগেও জলের সঙ্কট মিটবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি পরিবারের সদস্য পিছু ৫৫ লিটার করে জল পাওয়ার কথা। সূত্রের খবর, সম্প্রতি একটি বৈঠকে এখনও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি কেন, তার কারণ অনুসন্ধান করে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) এস পুন্নমবলম জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে (পিএইচই) নির্দেশ দিয়েছেন। জেলাশাসকের কথায়, “পিএইচই-র কর্মী, আধিকারিকেরা দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছেন। আগামী গ্রীষ্মের আগে প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।”

পিএইচই সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ছ’শো কোটি টাকার প্রকল্পে জেলায় ২ লক্ষ ৮৫টি পরিবারে গৃহ-সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় দু’লক্ষ পরিবারে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কাঁকসা, বারাবনি ও দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকে যথাক্রমে ৮০, ৫০, ৪৬ শতাংশ কাজ হয়েছে। কাজের অগ্রগতি ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে অন্ডাল, সালানপুর, পাণ্ডবেশ্বর ও রানিগঞ্জ ব্লকে। সব থেকে খারাপ হাল জামুড়িয়া ব্লকে। সেখানে পাঁচ শতাংশেরও কম কাজ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে পিএইচই-র আধিকারিক রূপম ঘোষের দাবি, “মার্চের মধ্যে জলের গৃহ-সংযোগের প্রকল্প শেষ হবে।” পাশাপাশি, পিএইচই সূত্রে জানা গিয়েছে, জামুড়িয়া, পাণ্ডবেশ্বর, বারাবনি ও সালানপুর, এই চারটি ব্লকে পানীয় জলের সমস্যা প্রকট। তাই এই চারটি ব্লকে গৃহ-সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জেলাশাসকও জানিয়েছেন, মাইথনের বরাকর নদ থেকে পৃথক একটি জলের পাইপলাইন বসিয়ে সালানপুর ও বারাবনি ব্লকে প্রায় ৪০ হাজার পরিবারকে পানীয় জল দেওয়ার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

তবে, কেন নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রকল্পের কাজ শেষ হল না, তা নিয়ে প্রশাসন সদুত্তর দিতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে ক্ষোভপ্রকাশ করছেন বাসিন্দারা। বারাবনির বাসিন্দা পরেশ কর্মকার, সালানপুরের জেমারির বাসিন্দা মহফুজ আলমেরা বলেন, “২০১৯ লোকসভা ভোটের সময় থেকে পানীয় জলের গৃহ-সংযোগের প্রতিশ্রুতি পাচ্ছি। আরও একটা লোকসভা ভোট এসে গেল। এখনও সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হল না।”

বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায়ের তোপ, “সরকারের নেতা ও মন্ত্রীরা জনতার টাকা লুট করতে ব্যস্ত। তাই মানুষের জন্য জরুরি প্রকল্পের কাজ শেষ করতে
আগ্রহী নয়।” সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “প্রতিটি গ্রীষ্মের আগে জলের সঙ্কট মেটানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরে সবই চাপা পড়ে যায়। এই সরকার মানব কল্যাণে কোনও কাজই করতে পারে না।” বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, “৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকে বামফ্রন্ট যা করতে পারেনি, তা নিয়ে সিপিএমের কথা বলা সাজে না। বর্তমান সরকার সেই কাজ ৮০ শতাংশ করে ফেলেছে। আর প্রতিশ্রুতির বিষয়ে বিজেপি যত কম কথা বলে, ততই মঙ্গল।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement