কাজে ব্যস্ত কাঁকসার শিবানী বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র
ছোট থেকেই কিছু একটা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছে ছিল। সেই ইচ্ছেকে সঙ্গে নিয়েই পথচলা শুরু কাঁকসার ২ নম্বর কলোনির শিবানী বিশ্বাসের। সেই লক্ষ্যেই বছর দেড়েক আগে শিবানীদেবী তৈরি করেন বিড়ি তৈরির একটি কারখানা। প্রাথমিক ভাবে ‘বাধা’-ও এসেছিল কিছু। কিন্তু সে সব কাটিয়ে এখন ওই কারখানা শিবানীদেবীর পাশাপাশি, এলাকার তিন জন মহিলা ও দু’জন পুরুষের রুটিরুজির ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই এলাকায় কয়েকটি বিড়ি কারখানা রয়েছে। বেশির ভাগেরই মালিক পুরুষেরা। তবে শ্রমিক মহিলারা। এ ছাড়া, মহাজনের কাছ থেকে বরাত নিয়ে বাড়িতে বিড়ি তৈরি করে তার বিনিময়ে পারিশ্রমিক পান এলাকার মহিলারা। এই পরিবেশে থেকেই বছর ৩৫-এর শিবানীদেবী ঠিক করেন, নিজের মতো করে কিছু একটা করতে হবে। বছর দেড়েক আগে জমানো ৩০ হাজার টাকার গোটাটা দিয়েই শুরু হয় পথ চলা। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ শিবানীদেবী জানান, প্রথমে কাঁচামাল এনে নিজেই বিড়ি তৈরি করতেন। তার পরে তা প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করার কাজ করতেন।
কিন্তু বাজারে গিয়েই ‘বাধা’। শিবানীদেবীর অভিজ্ঞতা, ‘‘বাজারে গিয়ে দেখতাম, অনেক সংস্থা বরাত নিয়ে বসে আছে। ফলে, ক্রেতা পেতাম না। অনেকে আমার তৈরি জিনিস নতুন বলে নিতেও চাইতেন না। নিলেও দাম দিতেন না। তবে ধীরে ধীরে তাঁরাও বুঝলেন, আমাকে এ ভাবে দমানো যাবে না। তাঁরাও পাশেই দাঁড়ালেন।’’ যে তিন জন মহিলা রয়েছেন শিবানীদেবীর সঙ্গে, তাঁদের অন্যতম শম্পা গায়েন, দোলন চক্রবর্তীরা বলেন, ‘‘দিদি এই কাজ দেওয়াতে সংসারের অনেকটাই উপকার হচ্ছে।’’ ওই কারখানায় কর্মরত রনি দাস ও নীরাঞ্জন বারুইয়েরাও বলেন, ‘‘শিবানীদেবীর জন্য আমরা গর্বিত। আমরা মূলত বিড়ি প্যাকেটজাত করি।’’
কিন্তু কেন এমন পেশা বেছে নেওয়া? শিবানীদেবীর স্বামী রতন সরকার পেশায় রাজমিস্ত্রি। তিনি বলেন, ‘‘আমার একার রোজগারে দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে আমাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। শেষমেশ স্ত্রী এগিয়ে এলেন। সংসারের যাবতীয় দায়দায়িত্ব সামলে বিড়ির কারখানার কাজও সামলাচ্ছেন। ওঁর জন্যই সংসারে আর কার্যত কোনও চাপ নেই।’’ মায়ের এই কাজে উদ্বুদ্ধ মেয়ে, নবম শ্রেণির ছাত্রী চন্দনা ও ছেলে, সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া রাজা। তারাও বলে, ‘‘মা আমাদের কাছে প্রেরণা।’’ আর মা চান, মেয়েরা পড়াশোনা করে এগিয়ে যাক। সঙ্গে ইচ্ছে, কারখানার বহর বাড়ানোরও। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েদের সর্বত্র এগিয়ে আসতে হবে। তা হলেই বাড়ির, সমাজের ভাল হবে।’’
শিবানীদেবীর এই কাজকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারাও। বিডিও (কাঁকসা) সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শিবানীদেবী মহিলাদের কর্মসংস্থানের জন্য উল্লেখযোগ্য কাজ করছেন। সরকারি স্তরেও এ ধরনের উদ্যোগকে সহযোগিতা করার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে। প্রয়োজনে, আমরাও তাঁর পাশে দাঁড়াব।’’