সাঁওতালি বইমেলা। — ফাইল চিত্র।
সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে পঠন-পাঠন নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে জঙ্গলমহলে। এখনও প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকস্তরে এর পরিকাঠামো প্রশ্ন উঠছে। সম্প্রতি সাঁওতালি ডিএলএড পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বাংলায় করা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
এই আবহে পঞ্চায়েত ভোটের আগে সরকারি স্তরে নানা আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। বিরসা মুন্ডার জন্ম দিনে রাজ্যস্তরের অনুষ্ঠানে বেলপাহাড়িতে এসেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীও। এ বার রাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রথম ‘সাঁওতালি সরকারি বইমেলা’রও আয়োজন হচ্ছে ঝাড়গ্রামে।
বেসরকারি উদ্যোগে প্রতি বছরই ‘অল ইন্ডিয়া সান্তালি রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র উদ্যোগে সাঁওতালি বইমেলা হয়। এ প্রসঙ্গে সাঁওতালি শিক্ষক সংগঠন খেরওয়াল মাচেৎ মাডোয়ার রাজ্য সাধারণ সম্পাদক লুদা সরেন বলেন, ‘‘সাঁওতালি মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিকাঠামোয় সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। সামান্য কিছু দিয়ে বেশি করে প্রচার করা হয়। তাই আগে শিক্ষাক্ষেত্রে পরিকাঠামোয় জোর দেওয়া উচিত।’’
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সাঁওতালি বইমেলা হবে অরণ্যশহরের রবীন্দ্র পার্কে। ৭ থেকে ১১ ডিসেম্বর পাঁচদিন ধরে চলবে মেলা। পদযাত্রার মাধ্যমে মেলার সূচনা হবে। ২৫টি বইয়ের স্টল থাকবে। থাকবে অন্যান্য স্টলও। ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক বাবুলাল মাহাতো বলেন, ‘‘রাজ্যে প্রথম সাঁওতালি বইমেলা ঝাড়গ্রামে হবে। বইমেলার পাশাপাশি সাঁওতালি অনুষ্ঠান হবে। এ ছাড়াও জয় জোহার, জাতিগত শংসাপত্র, শিক্ষাশ্রী প্রকল্প-সহ আদিবাসীদের নানা সুযোগ সুবিধা থাকবে।’’
ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতির পরে গত ১৯ বছরে সাঁওতালি সাহিত্যের ধারাটি যথেষ্ট সমৃদ্ধ হয়েছে। ঝাড়গ্রাম-সহ জঙ্গলমহলের একাধিক সাঁওতালি সাহিত্যিক গত দেড় দশকে সাহিত্য আ্যকাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। ঝাড়গ্রামে বাসিন্দা সাহিত্যিক খেরওয়াল সরেন পেয়েছেন ভারত সরকারের পদ্মশ্রী সম্মান। ফলে, সরকারি স্তরে রাজ্যে প্রথম সাঁওতালি বইমেলার উদ্যোগটি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, পঞ্চায়েত ভোটের আগে এ সব রাজনৈতিক চমক ছাড়া কিছু না। ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রমের কটাক্ষ, ‘‘রাজ্যে সাঁওতালি মাধ্যমের পঠন-পাঠন নিয়ে ঢালাও প্রচার করেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ তাঁর দলের বিধায়কের এলাকায় ছেলেমেয়েরাই সাঁওতালি মাধ্যম স্কুলের অভাবে স্কুলছুট হয়ে যাচ্ছে। সাঁওতালি ছেলেমেয়েদের মাতৃভাষায় শিক্ষিত হওয়ার ব্যবস্থা আগে করুক রাজ্য সরকার। তা না করে বইমেলার মাধ্যমে তারা যে কত সাঁওতাল দরদি পঞ্চায়েত ভোটের আগে সেই প্রচার করতে চাইছে।’’
জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা বিধায়ক দুলাল মুর্মু পাল্টা বলছেন, ‘‘সাঁওতালি শিক্ষা ও সাহিত্যের প্রসারে রাজ্য সরকার নিরবিচ্ছিন্ন কাজ করে চলেছে। কেন্দ্রের বিজেপির সরকার বা তার দলের সাংসদ কিছুই করেননি। ওদের মুখে এসব কথা মানায় না।’’ দুলালের মতে, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী একজন প্রকৃত আদিবাসী দরদি। সেই কারণে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কেবলমাত্র সাঁওতালি ভাষার পাঠকদের জন্য এমন বইমেলার আয়োজন করা হচ্ছে।’’