বাঁ দিকে, নিয়ামতপুরে বিজেপির তোরণ। ডান দিকে, বিএনআর বাসস্যান্ডে তৃণমূলের ব্যানার। ছবি: পাপন চৌধুরী
ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়েছে প্রায় ৭২ ঘণ্টা আগে। কিন্তু এখনও আসানসোলেও বহু এলাকায় সরকারি জায়গায় ঝুলতে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যানার থেকে ফ্লেক্স, পতাকা। শোভা পেয়েছে নেতা মন্ত্রীদের ছবি ও কাটআউটও। এ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছে রাজ্যের শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। তবে এ সব ব্যানার, ফ্লেক্স, কাটআউট খুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে দাবি জেলা প্রশাসনের।
সোমবার দেখা গেল, আসানসোল শহরে ঢোকার মুখে কালীপাহাড়ি লাগোয়া ছাতাপাথর সেতুর মুখে আছে ‘সিটি অব ব্রাদার হুড’ তোরণ। তোরণের দু’পাশে শোভা পেয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্ণাবয়ব কাটআউট। পুরসভার উদ্যোগে তৈরি এই তোরণটিতে জায়গা পাওয়া মুখ্যমন্ত্রীর সেই কাটআউট এখনও খুলে নেওয়া হয়নি বা ঢাকা হয়নি। শহরে পুরসভার উদ্যোগে একাধিক যাত্রীশেড তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেকটি যাত্রীশেডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ঝোলানো আছে। বহু যাত্রীশেডে তৃণমূলের ‘জোড়াফুল’ চিহ্ন আঁকা ছবিও ঝোলানো রয়েছে।
শুধু তৃমমূল নয়। বিজেপির পরিবর্তন যাত্রাকে ঘিরে জিটিরোড ও বিভিন্ন রাস্তার দু’পাশ জুড়ে একাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ছবি লাগানো ওই সব তোরণগুলি এখনও খুলে নেওয়া হয়নি। শহর জুড়ে বিদ্যুতের খুঁটিতে তৃণমূল ও বিজেপির অসংখ্য ব্যানার, ফ্লেক্স ও পতাকা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এ দিকে, দুর্গাপুরেও অনেক জায়গায় সরকারি নির্মাণে বা সরকারি সংস্থায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পোস্টার, ব্যানার, পতাকা, নেতাদের ছবি নজরে এসেছে সোমবারও।
অথচ, নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী ভোটের নির্ঘন্ট প্রকাশিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সরকারি জায়গায় ঝোলানো রাজনৈতিক দলের ব্যানার, ফেস্টুন বা কাটআউট খুলে ফেলতে হবে। গত শনিবার জেলার প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের ডেকে এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন জেলার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক ও জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি। কিন্তু সোমবার পর্যন্তও সেই নির্দেশ মানা হয়নি
বলে অভিযোগ।
যদিও তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক ভি শিবদাসনের দাবি, ‘‘সরকারি জায়গায় দলের তরফে কোনওরকম প্রচার মূলক ব্যানার, ফ্লেক্স নেই। প্রশাসনের তরফে কিছু থাকলে সেটা আমাদের বিষয় নয়।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই অবশ্য বলেন, ‘‘সরকারি জায়গায় যদি দলের কোনওরকম ব্যানার, ফ্লেক্স থাকে সেগুলি দ্রুত খুলে নেওয়া হবে।’’
তবে এ দিন এমসিসি টিমকে নানা জায়গা থেকে সরকারি সম্পত্তিতে লাগানো রাজনৈতিক দলের পোস্টার, পতাকা, হোর্ডিং খুলতে দেখা গিয়েছে। দুর্গাপুর মহিলা কলেজ মোড়ে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে লাগানো প্রধানমন্ত্রীর বড় ছবি-সহ করোনা সচেতনতার বার্তা দেওয়া হোর্ডিং খুলে দেওয়া হয়। মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) অর্ঘ্যপ্রসূন কাজি বলেন, ‘‘এমসিসি টিম ধাপে ধাপে রাজনৈতিক দলের ছবি, ব্যানার, হোর্ডিং সরানোর কাজ করছে। বাকিগুলিও দ্রুত সরিয়ে ফেলা হবে।’’
জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আদর্শ নিবার্চন বিধি লাগু হতেই সরকারি জায়গায় ঝোলানো রাজনৈতিক দলের ব্যানার, ফ্লেক্স খোলা হচ্ছে। কাটআউট খোলা সম্ভব না হলে সেগুলি ঢেকে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’ আসানসোল পুর-কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, কালীপাহাড়ি লাগোয়া ছাতাপাথর সেতুর মুখে ‘সিটি অব ব্রাদারহুড’ তোরণে লাগানো মুখ্যমন্ত্রীর কাটআউট ঢেকে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।