বর্ধমানের তেলিপুকুরে যাত্রীদের বাসের অপেক্ষা। —নিজস্ব চিত্র।
শহরের ভিতরের নানা স্টপ থেকে এত দিন বাস ধরতেন যাত্রীরা। ভিন্ জেলার বাঁকুড়া, আরামবাগ বা জেলার খণ্ডঘোষ, রায়নার যাত্রীদের এই অভ্যাস ধাক্কা খেল বৃহস্পতিবার। বর্ধমান শহরের ভিতরে বাস ঢোকা বন্ধ হওয়ায় ওই সব রুটে যাত্রীদের অনেকে এ দিন দুর্ভোগে পড়েছেন বলে অভিযোগ। তাঁদের দাবি, বাসের হয়রানির সঙ্গে বর্ধমান শহরে যাওয়ার জন্য বাড়তি খরচও যোগ হচ্ছে। সে কারণে বীরহাটা, কার্জন গেট, স্টেশন এলাকার ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, বাড়তি খরচ করে ওই সব রুটের যাত্রীরা দোকান পর্যন্ত আসবেন না। আবার উল্লাস, পুলিশলাইন, বড়নীলপুর মোড়ের ব্যবসায়ীরা এই পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখছেন।
এত দিন বীরহাটা, পুলিশলাইন, বিবেকানন্দ কলেজ মোড় থেকে অনেকে বাস ধরতেন। নতুন পরিস্থিতিতে কোনও অসুবিধা হবে না বলে অবশ্য দাবি করছেন ‘বর্ধমান টাউন সার্ভিস বাস ওনার্স সমিতির’ সম্পাদক বাবলু শর্মা।
তাঁর কথায়, ‘‘বাইরের বাস ঢোকার জন্য টাউন সার্ভিস বাসগুলি দিনে বেশি যাতায়াত করতে পারত না। এখন যাত্রী হবে, বাসগুলিও দিনে দশ বার যাতায়াত করবে। রাস্তায় যাত্রী যতক্ষণ, বাসও ততক্ষণ থাকবে। শহর জুড়ে প্রচারও করা হবে।’’ জেলা পরিবহণ দফতরের দাবি, ৮৫টি টাউন সার্ভিস বাস রয়েছে। আরও ২০-২৫টি বাসের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এক-একটি বাস দিনে ১০ বার করে যাতায়াত করতে পারবে। পূর্ব বর্ধমান আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক (আরটিও) অনুপম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাত ৯টা পর্যন্ত রাস্তায় বাস থাকা নিশ্চিত করা গিয়েছে। এ ছাড়া, জরুরি প্রয়োজনে সরকারি বাস রাখা থাকছে।’’
বীরহাটা মোড়ে বাসের অপেক্ষায় থাকা খণ্ডঘোষের শেখ নাসির, বুলচন্দপুরের মহিম সরকারদের দাবি, ‘‘এখান থেকে বাস ধরলে আমাদের হয়রানি কম হত। আবার আলিশা বা তেলিপুকুরে যেতে বাড়তি খরচ হত না।’’ বর্ধমানে ব্যবসার কাজে আসেন পাত্রসায়রের বিশ্বনাথ দাস, আরামবাগের শেখ কালামরা। তাঁরা বলেন, ‘‘এক খরচেই বাসে শহরে ঢুকে পড়তাম। এখন অতিরিক্ত ২০ টাকা খরচ হবে। আমাদের মতো অনেক ছোট ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষের সমস্যা হবে।’’
পরিবহণ দফতর জানিয়েছে, আলিশা থেকে নবাবহাট পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার রাস্তায় ২৬টি জায়গায় ও তেলিপুকুর থেকে নবাবহাট বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ২১টি জায়গায় বাস দাঁড়াবে। এ দিন এসবিএসটিসি-সহ বেশ কিছু বাস শহরের ভিতরে যাতায়াত করায় বাস মালিকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আলিশায় গোলমালের পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল। আরটিও জানান, বিষয়টি নজরে আসায় তাঁরা খতিয়ে দেখছেন।
হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ায় ব্যবসায়ীদের একাংশ অশনি সঙ্কেত দেখছেন। তাঁদের দাবি, তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড বন্ধ হওয়ার পরে বীরহাটা-কার্জন গেট-স্টেশন এলাকায় ব্যবসার হাল খারাপ হয়েছে। এখন শহরে বাস ঢোকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তা আরও খারাপ হবে। এখন আলিশা ও নবাবহাটের দিকে ব্যবসা বেড়েছে। সেখানকার ব্যবসায়ীদের আশা, শহরের ভিতরে বাস না ঢুকলে ক্রেতারা তাঁদের দোকানে বেশি আসবেন।
শহরের শিক্ষক, আইনজীবী-সহ বিশিষ্টদের দাবি, আদালতের রায়ে শহরে যানজট কমবে। তবে এখনও তেলিপুকুরের দিকে বাস চলাচল ও সময় নিয়ন্ত্রণে না আনলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকবে। বাস ব্যবসায়ীরাও তেলিপুকুরে যাত্রীদের সুবিধায় প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর দাবি জানিয়েছেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে কথা চলছে।