কোথাও গুলিবিদ্ধ সিপিএম কর্মী, কোথাও আবার দখল হল তৃণমূলের কার্যালয়— রবিবারও হামলা-পাল্টা হামলার অভিযোগ উঠল জেলা জুড়ে।
রবিবার সকালে বারবনির কাঁটাপাহাড়ি এলাকায় পথিক মণ্ডল নামে এক সিপিএম কর্মীর ডান পায়ে গুলি লাগে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় ব্যবসায়ী পথিকবাবু এ দিন নিজের দোকানে বসে ছিলেন। তাঁর ভাই শ্রীদামবাবু জানান, বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ জনা কয়েক দুষ্কৃতী রিভলবার হাতে দোকানে ঢুকে পড়ে। দোকানের গেট আটকে শুরু হয় তাণ্ডব। ভাঙচুর করা হয় দোকানে। পথিকবাবুকে লক্ষ করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। শ্রীদামবাবু চিৎকার জুড়লে ছুটে আসেন পড়শিরা। চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। শ্রীদামবাবুর অভিযোগ, ‘‘দুষ্কৃতীরা সকলেই তৃণমূল কর্মী।’’
বাসিন্দারা পথিকবাবুকে আসানসোলের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করান। ঘটনার পরেই বিক্ষোভ শুরু করেন বাসিন্দারা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দলীয় কর্মীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর মিলতেই এলাকায় পৌঁছন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য বংশগোপাল চৌধুরী। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ফল প্রকাশের পরেই বারাবনির নানা এলাকায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল। কাঁটাপাহাড়িতে সিটুর একটি অফিস জোর করে বন্ধ করা হয়েছে। পথিকবাবু আমাদের পোলিং এজেন্ট ছিলেন। সেই আক্রোশেই এই হামলা।’’ যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতা পাপ্পু উপাধ্যায় বলেন, ‘‘জমি-বিবাদকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা। এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই।’’ পুলিশ জানায়, অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।
শনিবার রাতে ফের গোলমাল বাধে জামুড়িয়ায়। সিপিএমের অজয় জোনাল সম্পাদক মনোজ দত্ত অভিযোগ করেন, গোবিন্দপুর, ইকরা, সত্তরে দলের কর্মীদের মারধর, বাড়িতে হামলা হয়েছে। রাখাকুড়া এলাকায় জাফর আলি-খাঁ নামে এক সিপিএম সমর্থককে বাড়িতে না পেয়ে তাঁর মাকে মারধর করা হয়েছে।
রানিগঞ্জের বেলিয়াবাথান, দুর্গাপুরের সগড়ভাঙায় গোলমাল পাকানোয় নাম জড়িয়েছে সিপিএম ও কংগ্রেসের। তৃণমূলের অভিযোগ, শনিবার রাতে দলের এক কর্মীকে তৃণমূল না ছাড়লে স্ত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দেয় দু’জন সিপিএম নেতা। রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ২ ঘণ্টা স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব নিমচা ফাঁড়িতে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। রানিগঞ্জের বল্লভপুরেও দুর্গেশ লালা নামে এক তৃণমূল কর্মীকে সিপিএম মারধর করেছে বলে অভিযোগ। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিপিএম।
সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদে শনিবার রাতে দুর্গাপুর থানায় স্মারকলিপি দেয় তৃণমূল। শুক্রবার রাতে বেনাচিতির উত্তরপল্লিতে সিপিএমের একটি অফিসে ভাঙচুর হয়। তৃণমূলের অভিযোগ, ওই কার্যালয়ে দুষ্কৃতীদের আনাগোনা হচ্ছে। তারাই এলাকা অশান্ত করার চেষ্টা করছে।
রবিবার বিকেলে দুর্গাপুরের সগড়ভাঙা লাগোয়া এসবি মোড়ে তৃণমূলের একটি স্থানীয় কার্যালয় কংগ্রেস দখল করে নেয় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের দুর্গাপুর ৩ ব্লক সভাপতি সুনীল চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘শুক্রবার দলের নাম মুখে দেওয়া হয় ওই অফিস থেকে। রবিবার অফিসটিই দখল করে নিয়েছে। রবীন্দ্রপল্লিতে আমাদের এক সমর্থকের বাড়িতেও হামলা হয়েছে।’’ কংগ্রেসের জেলা শিল্পাঞ্চল সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘ওখানে যাঁরা আগে তৃণমূলে ছিলেন, এখন তাঁরা কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। তাঁই নিজেদের অফিসটিও কংগ্রেসের করে নিয়েছেন। এর মধ্যে দখলের কিছু নেই।’’ সিপিএমের দুর্গাপুর ২ পূর্ব জোনাল সম্পাদক পঙ্কজ রায়সরকার বলেন, ‘‘ কার্যালয় দখল করা অনুচিত। কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
শনিবার রাত থেকে পূর্বস্থলীর কালীনগর বাগান এলাকায় তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ওই ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে র্যাফ নামানো হয়। মন্তেশ্বরের পুড়শুঁড়ি এলাকায় দলের একটি অফিস দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ পূর্বস্থলী উত্তরের সিপিএম বিধায়ক প্রদীপ সাহার। সিপিএমের অভিযোগ, মেমারি, কালনা, সিমলন, মধুপুর, কাঁকুড়িয়া পঞ্চায়েত এলাকাতেও সন্ত্রাস চালানো হয়েছে। বিরোধী দলের অনেক নেতা-কর্মীই এলাকাছাড়া বলে তাদের দাবি। কালনা জোনাল সম্পাদক সুকুলচন্দ্র শিকদার জানান, সব কিছু পুলিশকে জানানো হয়েছে। মঙ্গলকোটের কাশেমনগরে দলের চারটি পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতারা বৈঠক করছিলেন। সেখানে দলেরই গোষ্ঠীর লোকজন চড়াও হয় বলে অভিযোগ। সাত জন জখম হন।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘জয়ের জন্য দল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানাতে বলেছে। আইন ভেঙে কেউ কিছু করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।’’