মজে যাচ্ছে দুর্গাপুর ব্যারাজ, এমনই অভিযোগ বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়ের। ছবি: বিকাশ মশান
পলি তুলে দুর্গাপুর ব্যারাজ দ্রুত সংস্কারের জন্য ব্যবস্থার আর্জি জানিয়ে মাস পাঁচেক আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন দুর্গাপুর পূর্বের সিপিএম বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের অধীনস্ত ‘নদী সংরক্ষণ ডিরেক্টরেট’ থেকে চিঠি দিয়ে বিধায়ককে জানানো হয়েছে, বিষয়টি রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারে পড়ে। তবে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার জন্য বিষয়টি দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনকে (ডিভিসি) জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বিধায়ক লেখেন, ব্যারাজ তৈরির সময়ে জলাধারের জলধারণ ক্ষমতা ছিল ৬.১ মিলিয়ন ঘনমিটার। ডিভিসি-র ২০১১-র সমীক্ষায় দেখা যায়, পলি জমার কারণে তা হয়েছে, ৩.৩৯৭ মিলিয়ন ঘনমিটার। অর্থাৎ, ১১ বছরে জলধারণ ক্ষমতা কমেছে ৪৪.৩২ শতাংশ। চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, বর্তমানে জলাধারের জলধারণ ক্ষমতা প্রায় ৫৯ শতাংশ কমে গিয়েছে। একমাত্র পলি তুলেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে জানান বিধায়ক।
বিধায়কের চিঠিতে জানানো হয়েছে, সমস্যা মেটাতে ১৯৯৮-য় ডিভিসি একটি সমীক্ষা করে। ডিভিসি সেই সময়ে জানায়, বিশেষ পাম্পের সাহায্যে জলাধারের পলি তুলে তা রানিগঞ্জ এলাকার পরিত্যক্ত খনি ভরাটের কাজে লাগানো সম্ভব। কিন্তু বিধায়কের অভিযোগ, ‘‘এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে, ব্যারাজ বাঁচাতে গেট খুলে দিয়ে অতিরিক্ত জল ছেড়ে দিতে হয়। এর ফলে নিম্ন দামোদরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়।’’
কিন্তু কেন দ্রুত ব্যারাজ সংস্কার জরুরি?
প্রথমত, স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপুরের ব্যারাজ থেকে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ অংশে সেচের জল সরবরাহ করা হয়। ব্যারাজে পরিমাণ মতো জল মজুত না থাকায় অনেক সময়েই প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করা যায় না বলে অভিযোগ চাষিদের একাংশের। দ্বিতীয়ত, বিস্তীর্ণ অঞ্চলের শিল্প ও পানীয় জলের উৎস এই ব্যারাজ। এখান থেকে জল নিয়ে তা পরিশোধন করে সরবরাহ করে ডিপিএল, ডিটিপিএস, দুর্গাপুর পুরসভা। বাঁকুড়ার মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রও এখান থেকেই জল নেয়। পানীয় জলের পাশাপাশি, শিল্পাঞ্চলের যাবতীয় শিল্প-কারখানার জলও আসে ব্যারাজ থেকেই। ফলে, জল না পেলে পানীয় জল ও শিল্পের জন্য জলের অভাব ঘটবে। বিধায়কের আশঙ্কা, ‘‘এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না করা হলে চরম পরিণতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে ভুগবে দুর্গাপুর।’’
সন্তোষবাবু জানান, তাঁর চিঠির জবাবে সম্প্রতি নদী সংরক্ষণ ডিরেক্টরেটের ডিরেক্টর অজয়কুমার সিংহ জানান, সমস্যার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছেন। তবে জল রাজ্যের বিষয়। তাই জলসম্পদের ঠিক ব্যবস্থাপন নিশ্চিত করতে রাজ্যকেই পদক্ষেপ করতে হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রক কারিগরি পরামর্শ দিতে পারে। পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে বিধায়কের চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। বিধায়ক বলেন, ‘‘২০১৬ থেকে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিচ্ছি। এত জরুরি একটি বিষয়। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, রাজ্যকে এগিয়ে আসতে হবে। অথচ, দু’পক্ষের থেকেই কোনও সদর্থক সাড়া নেই।’’
এ দিকে, ব্যারাজ সংস্কার নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্বের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ২০১৩-য় বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের তৎকালীন সিপিএম সাংসদ সইদুল হক সাবেক কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী হরিশ রাওয়াতকে সমস্যার কথা জানান। জবাবে মন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার ব্যারাজের বালি তোলার কাজ করবে। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০১৭-য় কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতী দুর্গাপুরে এসে দাবি করেন, ঝাড়খণ্ড সরকার দামোদর সংস্কারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব জমা দিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ থেকে তেমন প্রস্তাব আসেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৎকালীন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য তখন সেই দাবি উড়িয়ে দেন। বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য রাজ্যের বর্তমান সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত জবাব দেননি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তারও।