সারদা সিংহ। পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জের জেমারি বেলিয়াবাথানের নির্দল প্রার্থী। শনিবার। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
মনোনয়ন-পর্বের শুরু থেকেই রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, বারাবনি-সহ জেলার নানা প্রান্তে তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসাবে ভোটে দাঁড়াতে গিয়েছিল অনেককেই। তৃণমূল নেতৃত্ব বার বার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও, ওই নির্দল বা গোঁজদের অনেকেই ভোট-ময়দানে ছিলেন। শনিবার পঞ্চায়েত ভোটের দিনেও দেখা গেল, এমন গোঁজরা কেউ বুথ আগলে বসে রইলেন, কেউ বা বচসায় জড়ালেন তৃণমূলের লোকজনের সঙ্গে। তবে বিষয়টিকে আমল দিতে নারাজ তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব।
রানিগঞ্জের জেমারি পঞ্চায়েত এলাকায় পঞ্চায়েত স্তরে ভোটে দাঁড়িয়েছেন এলাকার পরিচিত তৃণমূল নেতা গুড্ডু সিংহের স্ত্রী সারদা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দীর্ঘক্ষণ বেলিয়াবাথানের বুথেই বসে থাকতে দেখা যায়। পাশাপাশি, ‘বহিরাগতেরা’ এলে, তাঁদের প্রতিরোধও করেন ওই দম্পতি, জানা যাচ্ছে এমনটাই। তৃণমূলের প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি গুড্ডুর বক্তব্য, “জনসাধারণ আমাদের পাশে আছে। টিকিট না মেলায় স্ত্রী ভোটে দাঁড়িয়েছেন। তৃণমূলের কিছু লোকজন সন্ত্রাস করতে চাইলেও আমরা কিছুটা আটকাতে পেরেছি।”
অশান্তি বাধে বারাবনিতেও। পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূলের নেতা অজয় পাসোয়ান নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সকাল থেকেই বুথে-বুথে ঘুরেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, সকাল থেকেই তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বুথ-লুট, ভোটরদের ঢুকতে বাধা দেওয়া, ভুয়ো ভোটার নিয়ে আসা-সহ তৃণমূলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন তিনি। অভিযোগ, দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ ২১৫ নম্বর বুথে ভুয়োভোটার নিয়ে আসে তৃণমূল। অজয় তাতে বাধা দেন। শুরু হয় অশান্তি। হেনস্থার শিকার হয় সংবাদমাধ্যমের একাংশও। অজয়ের দাবি, “শেষবেলায় আমাকে প্রার্থী করেনি দল। তাই ভোটে দাঁড়িয়েছি।”
তৃণমূলের ‘গোঁজদের’ দাপট দেখা গিয়েছে জামুড়িয়ার পরাশিয়া পঞ্চায়েত এলাকায়। এখানে পঞ্চায়েত সমিতিতে দু’জন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল অনিলকুমার সিংহ, ববিতা বাসকী গোঁজ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের সকাল থেকে বিভিন্ন বুথেও ঘুরতে দেখা যায়। পঞ্চায়েত স্তরের ন’টি আসনের ছ’টিতে রয়েছেন অনিল অনুগামীরা। অনিলের অভিযোগ, “২০২২-এর লোকসভা ভোটেই প্রথম আমাদের জন্য তৃণমূল এই এলাকা থেকে লিড পেয়েছিল। তবুও প্রার্থী করা হয়নি।”
এই গোঁজদের জন্য আদৌ শাসক শিবিরের ভোটে কোনও প্রভাব পড়বে কি? তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বক্তব্য, “দলের ঊর্ধ্বে কেউ নন। স্পষ্ট বার্তা সত্ত্বেও, আমাদের যাঁরা ভোটে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। ওঁরা ভোটে প্রভাব ফেলতে পারবে না।” ইতিমধ্যেই জেলা তৃণমূল, দলের নির্দেশ অমান্য করে ভোটে দাঁড়ানোয় ১৬ জনকে সাসপেন্ড করেছে। পাশাপাশি, তাঁদের সমর্থন করার জন্য আরও ৩৩ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তবে অনিল-সহ গোঁজদের বেশির ভাগেরই বক্তব্য, “আমরা তৃণমূলেই আছি। দল ছাড়িনি আমরা!”