কাজ চলছে দাঁইহাটে একটি রাসের মণ্ডপে। নিজস্ব চিত্র।
রফি-কিশোর থেকে অরিজিৎ সিংহের গান বাজছে। আর তার সঙ্গে সঙ্গ দিচ্ছে নাচের বোল। দেদার উড়ছে ৫০-১০ টাকার নোটও। —ফি বছর দাঁইহাটের রাস ও কাটোয়ার ‘কার্তিক লড়াই’য়ে এমন দৃশ্যটা বড্ড চেনা। কিন্তু এ বার নোট-বদলের জেরে সেই নাচ আর হবে কি না, তা নিয়েই চিন্তায় উদ্যোক্তারা। হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ‘ছোট নোট’ না থাকায় উৎসবও শেষমেশ কতখানি সুষ্ঠু ভাবে করা যাবে, তা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান উদ্যোক্তারা।
রাত পোহালেই দাঁইহাটে রাস উৎসব। অন্যান্য বছর এই সময় মণ্ডপগুলিতে প্রস্তুতি থাকে একেবারে তুঙ্গে। এ বার সকলেই যেন কেমন মনমরা। কেন এমনটা? বিভিন্ন পুজো কমিটির কর্তারা জানান, যে কোনও কিছুর বায়না করতে গেলেই প্রথমেই বলা হচ্ছে, ‘৫০-১০০ টাকার নোট লাগবে।’ নোট বাতিলের জেরে চাঁদাও তেমন ওঠেনি বলে জানান সুভাষ রোডের একটি পুজো মণ্ডপের কর্তা। দাঁইহাট রাস উৎসবের কেন্দ্রীয় কমিটির কর্তা সন্দীপ দাসের কথাতেও দুঃশ্চিন্তা ফুটে উঠেছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাজনা, আলো— মঙ্গলবারের মধ্যে সবকিছুরই টাকা মেটাতে হবে। না হলে রাসের বিসর্জনে তারা আসবে না। বাজনা, আলোর মালিকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, ৫০০-১০০০ টাকার নোট নেবেন না। আবার ব্যাঙ্কেও চার হাজারের বেশি টাকা মিলছে না।” দাঁইহাটের রাস উৎসবে প্রায় ৫২টি উদ্যোক্তাদের কমিটি রয়েছে। শনিবারই স্থানীয় ব্যাঙ্কগুলিকে খুচরো দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা সুমন দাসেরা।
উল্টো দিকে, রাসের পরে বৃহস্পতিবার রাতে রয়েছে কাটোয়ার ‘কার্তিক লড়াই।’ শোভাযাত্রায় প্রতিটি কমিটি ন্যূনতম চার-পাঁচটি করে বাজনা রাখে। স্থানীয় এলাকার পাশাপাশি কলকাতার বিভিন্ন ব্যান্ড কোম্পানি থেকেও বাজনা আসে। পুলিশের হিসেব অনুসারে, অন্তত ৩৫০ থেকে ৪০০ বাজনা কার্তিকের শোভাযাত্রায় থাকে। কিন্তু নোট বাতিলের পরে কাটোয়ার কাছারি রোডের একটি ক্লাবের কর্তা জানান, রবিবার রাতে তাঁকে কলকাতার ব্যান্ড কোম্পানির এক কর্তা জানিয়েছেন, ‘পেমেন্ট চায় একশো টাকায়। না হলে আমরা যাব না।’ একই হাল অন্য ক্লাবগুলির ক্ষেত্রেও। এই পরিস্থিতিতে বাজনা ছাড়া ‘কার্তিক লড়াই’ কী ভাবে জমবে, তা ভেবে কূল পাচ্ছেন না বলে জানান উদ্যোক্তারা।
নোট বাতিলের জেরে সমস্যায় পড়েছেন এলাকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারাও। দাঁইহাটের ব্যবসায়ী দেবু পোদ্দার, বধূ অনিতা রাজবংশীদের আক্ষেপ, ‘‘রাসের জন্য বাড়িতে আত্মীয়স্বজন, অতিথিরা আসতে শুরু করেছেন। ছোট নোটের অভাবে কী ভাবে বাজার করব, তাইই ভেবে পাচ্ছি না।’’ কয়েক জন ব্যবসায়ী আবার জানান, রাসের কথা ভেবে বেশি জিনিসপত্রের জোগান রাখা হয়েছে। কিন্তু হাতে টাকা না হওয়ায় ক্রেতার দেখা মিলছে না।
এই পরিস্থিতিতে কাটোয়ার কার্তিক পুজোর আয়োজিক বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যরা ঠিক করেছেন, প্রত্যেকে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে নোট-বদল করে আনবেন। সঞ্চয়ের ঝাঁপি খুলে খুচরো টাকা পুজোয় ঢালছেন নাচিয়ের দলও। তাঁদের কথায়, ‘আগে তো পুজো হোক। তারপরে নাচ।’
তবে এতকিছু করেও শেষরক্ষা হয় কি না, তা নিয়ে চিন্তায় সকলে। তাই বোধহয় সবারই মুখে এক রা, ‘সব কিছু কেমন যেন ঘেঁটে গেল।’