বর্ধমান ভাগ হয়ে নতুন জেলা হিসেবে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের আত্মপ্রকাশের আর বাকি মাত্র কয়েক দিন। কিন্তু তার আগে জেলা পরিষদ আলাদা কবে হবে, রানিগঞ্জকে মহকুমা করা হবে কি না, এমনই নানা প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে বণিকসভা। প্রশাসনের যদিও দাবি, জেলা ভাগের যাবতীয় প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সারা হয়ে গিয়েছে।
বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারই আসানসোলে একটি বৈঠকে বিভিন্ন প্রশাসনিক বিষয়ের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা হয়। শুক্রবার জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘নতুন জেলার সীমানা হবে কাঁকসা থেকে বরাকর পর্যন্ত। ১৪ এপ্রিলের আগে যে কোনও দিন আসানসোলে জনসভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, সেই সভা থেকেই নতুন জেলার ঘোষণা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।
ওই বৈঠকেই ঠিক হয়েছে, আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) পুরনো ভবন, কোঅপারেটিভ, সিভিল ডিফেন্স ভবনে নতুন জেলার বেশির ভাগ কার্যালয়গুলি থাকবে। জেলাশাসকের দফতর হবে এডিডিএ ভবনে। এই প্রসঙ্গে দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের সিপিএম বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়ের দাবি, ‘‘জেলা ভাগের নাম করে কোনও সরকারি দফতর যাতে দুর্গাপুর থেকে আসানসোলে না সরানো হয়, তা দেখতে হবে।’’
এখনও পর্যন্ত নতুন জেলার সদর হওয়ার দৌড়ে আসানসোলই এগিয়ে রয়েছে বলে খবর। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দুর্গাপুর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি চন্দন দাস, বেঙ্গল সাবআরবান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রফুল্ল ঘোষদের দাবি, ‘‘জেলা সদরের জন্য দুর্গাপুরই উপযুক্ত। তবে সরকার কী ভাবছে, জানি না।’’
প্রশ্ন রয়েছে, নতুন জেলা তৈরির আগে পরিকাঠামো নিয়েও। জেলা ভাগের সঙ্গে জেলা পরিষদও আলাদা হয়ে যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে পঞ্চায়েত দফতরের অন্দরেই। কারণ, এত দ্রুত জেলা পরিষদ আলাদা করা সম্ভব হবে না। বিষয়টি নিয়ে বিজেপি-র আসানসোল জেলা সভাপতি তাপস রায় বলেন, “জেলা পরিষদের ১৭ জন সদস্যকে প্রতিনিয়ত বর্ধমানে ছুটতে হবে।’’ সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্যকুমার মল্লিকও বলেন, “আরও পরিকাঠামো তৈরি করা দরকার ছিল। এই সরকার কী কী প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিচ্ছে, সে বিষয়ে মানুষের স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার ছিল।’’ যদিও প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের দাবি, জেলাপরিষদ কার্যালয়টি মহকুমাশাসকের দফতরের একাংশেই চালু করা হবে। আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারিরও দাবি, ‘‘দ্রুত সব কাজ হয়ে যাবে।’’
জেলা ভাগের সঙ্গে সঙ্গে রানিগঞ্জকে মহকুমা করা হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। রানিগঞ্জ বণিকসভার তরফে রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান বলেন, “জেলা ভাগের সঙ্গে রানিগঞ্জকে মহকুমা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।’’ একই দাবি নাগরিক সংগঠনের তরফে রামদুলাল বসুরও।