চলছে অভিযান। নিজস্ব চিত্র
রাত প্রায় সাড়ে ৮টা। দামোদরের তীরে প্রায় দু’কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে বালির ট্রাক। আচমকা, সেখানে পরপর আটটি গাড়ি এসে দাঁড়াল। নামলেন জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী। খোঁজ করলেন চালক, খালাসিদের। অথচ, দেখা মিলল না কারও। শুক্রবার সন্ধ্যায় বাঁকুড়ার পাত্রসায়র ব্লকের ভগবতীপুর মৌজার দামোদরের একটি বালিঘাটে এ ভাবেই অভিযান চালালেন জেলাশাসক। ৭৪টি ট্রাকের ‘ই-লকিং’ করা হয়।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানের গলসি ১-এ ধান কেনার বিষয়ে বৈঠক করে ফেরার পথে শিল্ল্যায় দামোদরে কয়েকটি বালি খাদান পরিদর্শন করেন জেলাশাসক। ফেরার পথে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে পারাজ মোড়ে অতিরিক্ত বালিবোঝাই কয়েকটি ট্রাক আটকান তিনি। প্রশাসন সূত্রে খবর, সেখানেই জেলাশাসক খবর পান, জেলার গোহগ্রামে অতিরিক্ত বালিবোঝাই ট্রাক ছুটছে।
এর পরে ভগবতীপুরের ওই বালি খাদানে পৌঁছন জেলাশাসক। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার, পূর্ব বর্ধমান) শশীকুমার চৌধুরী, গলসি থানার অফিসার ইনচার্জ দীপঙ্কর সরকার প্রমুখ। খাদানের এলাকা থেকে পূর্ব বর্ধমানের গোহগ্রাম পর্যন্ত বালির ট্রাকগুলি দাঁড়িয়েছিল। সেখানে ট্রাকগুলির নম্বর সংগ্রহ করেন প্রশাসনের কর্তারা। দেখা যায়, প্রতিটি গাড়িতেই অতিরিক্ত বালি চাপানো রয়েছে। রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত টর্চ জ্বেলে চলে ট্রাক-পরীক্ষা। জেলাশাসক বলেন, “৭৪টি ট্রাককে ই-লক করা হচ্ছে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গাড়ির নম্বর দেখে নিজস্ব পোর্টালে সেটির বিষয়ে সব তথ্য দেখা হয়। সেখান থেকেই যে কোনও গাড়ি ‘ই-লকিং’ করতে পারে প্রশাসন। এর অর্থ, গাড়িগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় গাড়িগুলির পারমিট, সমস্ত কাগজপত্র ‘সিজ়’ করতে পারে প্রশাসন। শশীকুমারবাবু বলেন, ‘‘অতিরিক্ত বালিবোঝাই করা অবৈধ কাজ। পাশাপাশি, দেখা যায়, কালি, মোবিল প্রভৃতি দিয়ে ট্রাকের নম্বর বদল করা হয়েছে। দু’টি ট্রাকে নম্বর প্লেট নেই। অতিরিক্ত বালিবোঝাই করার জন্য সর্বোচ্চ জরিমানা, গাড়ির নম্বর বদলানোর জন্য পরিবহণ আইনে পদক্ষেপ করা হবে।’’ অভিযান শেষে জেলাশাসক বলেন, “রাজস্ব-ক্ষতি রুখতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে সঙ্গে নিয়ে আরও অভিযান চালানো হবে।’’
কিন্তু চালক-খালাসিদের দেখা মিলল না কেন? ২ নম্বর জাতীয় সড়কের গলসি বাজার থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে ভগবতীপুরের ওই এলাকায় যেতে গেলে খন্দে ভরা রাস্তা পেরোতে হয়। ফলে, সময় বেশি লাগে। এই পরিস্থিতিতে চালক, খালাসিরা অভিযানের খবর পেয়ে চম্পট দেন বলে অনুমান পুলিশ, প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের।
ইন্দাস থানা সূত্রে জানা যায়, ভগবতীপুর ঘাটের কাছে কয়েকটি বৈধ খাদান রয়েছে। মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (বিষ্ণুপুর) ফাল্গুনী সৎপতি অবশ্য বলেন, ‘‘সোনামুখী, পাত্রসায়র, ইন্দাসের ঘাটগুলিতে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়।’’