আসানসোল পুরসভার রোহিনারডিহি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। নিজস্ব চিত্র।
লাইন দিয়ে, আগে থেকে নাম ‘বুক’ করেও কোভিড প্রতিষেধক পাওয়া যাচ্ছে না। এই অভিযোগে শুক্রবার সকালে আসানসোল পুরসভার রোহিনারডিহি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিক্ষোভ দেখালেন বাসিন্দাদের একাংশ।
শুক্রবার সকাল থেকে টিকা নিতে আসা লোকজন লম্বা লাইন দিয়েছিলেন আসানসোল পুরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই দ্বিতীয় ডোজ় নিতে এসেছিলেন। প্রথম ডোজ় নিতেও এসেছিলেন কেউ-কেউ। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়ে দেন, প্রথমে দ্বিতীয় ডোজ়ের টিকা দেওয়া হবে। পরে, প্রথম ডোজ়ের টিকা মিলবে। —এই ঘোষণার পরেই প্রথম ডোজ় নিতে আসা লোকজনের একাংশ প্রশ্ন তোলেন, ‘কো-উইন’ অ্যাপ্লিকেশনে আগে থেকে ‘স্লট বুকিং’ করে তাঁরা এসেছেন। তা হলে কেন টিকা মিলবে না। স্থানীয় বাসিন্দা দেবপ্রিয় অধিকারী বলেন, ‘‘কোন ভোরে মরিচকোটা থেকে এসে লাইন দিয়েছি। এখন বলছে, আমি আগে টিকা পাব না। এটা তো হতে পারে না।’’
প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, বিক্ষোভ বাড়তে থাকায় কার্যত উধাও হয়ে যায় দূরত্ব-বিধি। বাসিন্দাদের একাংশ গেট ভেঙে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ। তবে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এ দিকে, স্বাস্থ্য দফতর তড়িঘড়ি প্রথম ডোজ় নিতে আসা লোকজনকে টিকা দিতে শুরু করে।
কিন্তু এ বার বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন দ্বিতীয় ডোজ় নিতে আসা লোকজন। রানিগঞ্জ থেকে টিকা নিতে আসা সত্য সাউ নামে এক জন বলেন, ‘‘স্লট বুকিং করা আছে। প্রায় দশ দিন আগে দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার সময় পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও টিকা পাইনি।’’ অবশেষে পুরসভা স্লট বুকিং করে আসা লোকজনদের দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ থামে।
কেন এই পরিস্থিতি? আসানসোল পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক দীপক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দ্বিতীয় ডোজ়ের জন্য যাঁরা স্লট বুকিং করে টিকা নিতে আসছেন, তাঁরা অবশ্যই টিকা পাবেন। তবে প্রথম ডোজ়ের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়ম পালন করা হচ্ছে।’’ কী সেই নিয়ম? পুরসভা জানিয়েছে, রাজ্য সরকারের তরফে করোনার ‘সুপার স্প্রেডার’ হতে পারেন এমন ২৫টি পেশার সঙ্গে যুক্ত লোকজনকে সবার আগে প্রথম ডোজ়ের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন হকার, ভেন্ডার, দোকানমালিক ও কর্মচারী, পরিবহণকর্মী, বিদ্যুৎ-কর্মী, ব্যাঙ্ক, সরকারি কর্মী, স্কুল শিক্ষক প্রভৃতি। দীপকবাবুর সংযোজন: ‘‘জেলাশাসকের দফতর থেকে সুপার স্প্রেডার হতে পারে, এমন পেশার লোকজনের নামের তালিকা স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হচ্ছে। সেই তালিকা ধরে প্রথম ডোজ়ের টিকা দেওয়া হচ্ছে।’’
এ দিনের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে আসানসোলের পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অভিজিৎ ঘটকের দাবি, ‘‘যত সংখ্যায় টিকা আসছে, তার উপরে ভিত্তি করেই রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রথম ডোজ়ের টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে আশা করা হচ্ছে, জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে।’’