ভোট গণনার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন

প্রত্যেক বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য নির্দিষ্ট একটি করে ঘর। যে সংখ্যক টেবিল রাখার কথা, তাতে গণনা সম্পূর্ণ হতে লেগে যাবে ১০-১২ ঘণ্টা। দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজে ভোটগণনার এই ব্যবস্থাপনা নিয়ে অসন্তুষ্ট দুর্গাপুরের নানা রাজনৈতিক দল। তাদের মতে, এই ব্যবস্থায় যতক্ষণে ফল বেরোবে, তার বহু আগেই রাজ্যের প্রবণতা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৩:০৫
Share:

প্রত্যেক বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য নির্দিষ্ট একটি করে ঘর। যে সংখ্যক টেবিল রাখার কথা, তাতে গণনা সম্পূর্ণ হতে লেগে যাবে ১০-১২ ঘণ্টা। দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজে ভোটগণনার এই ব্যবস্থাপনা নিয়ে অসন্তুষ্ট দুর্গাপুরের নানা রাজনৈতিক দল। তাদের মতে, এই ব্যবস্থায় যতক্ষণে ফল বেরোবে, তার বহু আগেই রাজ্যের প্রবণতা পরিষ্কার হয়ে যাবে। ফলে, এখানে গণনাকেন্দ্রের বাইরে অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সিপিএমের তরফে বিষয়টি ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে। মহকুমা প্রশাসনের আশ্বাস, ঘরের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনে।

Advertisement

এ বার দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিম, পাণ্ডবেশ্বর, গলসি ও রানিগঞ্জ কেন্দ্রের ভোট গণনা হবে দুর্গাপুরের গভর্নমেন্ট কলেজে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য একটি করে ঘর নির্দিষ্ট করা হয়েছে। দুর্গাপুর পশ্চিমের জন্য ১৪, পাণ্ডবেশ্বরের জন্য ১০ এবং দুর্গাপুর পূর্ব, গলসি ও রানিগঞ্জের জন্য ১২টি করে টেবিল থাকছে। টেবিলের সংখ্যা এত কম থাকলে গণনা শেষ হতে অনেক সময় লাগবে বলে দাবি নানা দলের নেতাদের।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও কেন্দ্রের মোট বুথ টেবিল পিছু ভাগ করে দেওয়া হয়। যেমন, দুর্গাপুর পূর্বের মোট বুথের সংখ্যা ২৭৭। এই কেন্দ্রের জন্য টেবিল রয়েছে ১২টি। অর্থাৎ, গণনা প্রায় ২৩ রাউন্ড পর্যন্ত গড়ানোর সম্ভাবনা। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি রাউন্ড গণনার জন্য ২০ মিনিট সময় লাগবে বলে ধরা হয়ে থাকে। কিন্তু নেতাদের দাবি, পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছেন, সব কিছু ঠিক থাকলেও ২০ মিনিটে গণনা শেষ হয় না। তার উপরে যদি কোনও ইভিএমে সমস্যা থাকে, বুথে পড়া ভোট এবং ইভিএমের ভোটের মধ্যে সংখ্যার ফারাক ধরা পড়ে বা কোনও বুথে একাধিক ইভিএম থাকে তাহলে আরও সময় লাগে। গড়ে প্রতি রাউন্ডে ৩০ মিনিট সময় লাগলে দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের গণনা শেষ হতে ঘণ্টা দশেক পেরিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ, বিকেলের আগে ফল প্রকাশের সম্ভাবনা থাকবে না বলে দাবি রাজনৈতিক দলগুলির।

Advertisement

এর ফলে কী সমস্যা হতে পারে? সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকারের বক্তব্য, ‘‘প্রথমত, এত দীর্ঘক্ষণ ধরে গণনা চললে গণনাকর্মী ও রাজনৈতিক দলের এজেন্টরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। আবার, রাজ্যের অন্যত্র ফলের প্রবণতা আগেই জানা হয়ে যায়। তাতে এখানে গণনাকেন্দ্রের বাইরে রাজনৈতিক অশান্তির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।’’ তিনি জানান, ঘরের সংখ্যা বেশি করলে টেবিলের সংখ্যা বাড়ত। সেক্ষেত্রে রাউন্ডের সংখ্যা কমত। ফল ঘোষণা তাড়াতাড়ি হত। কংগ্রেস নেতা উমাপদ দাস দাবি করেন, ‘‘এ ভাবে অযথা বিলম্ব না করে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক, সেটাই আমরা চাই।’’ তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা শিল্পাঞ্চল সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ও মনে করেন, যত দ্রুত গণনা করা যায়, কমিশন সেই ব্যবস্থা করুক।

নির্বাচন আধিকারিকের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এত দিন সিটি সেন্টারের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে গণনা হত। আদালতে মামলা চলায় এ বার আর সেই স্কুল পাওয়া যায়নি। সিধো-কানহো ইন্ডোর স্টেডিয়ামে গণনাকেন্দ্র করার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ঢোকা-বেরনোর রাস্তা সীমিত। হাওয়া চলাচলের ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সে জন্য ওই কলেজ বেছে নেওয়া হয়েছে। সেখানে আবার সামনে জায়গা না থাকায় ভোটের দিনগুলিতে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে একটি ফাঁকা জায়গায় গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। সে ভাবেই অন্য বার যে ভাবে বেসরকারি স্কুলটিতে গণনা হত, তা কিছুটা পাল্টাতে হয়েছে।

দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক তথা মহকুমা নির্বাচনী আধিকারিক শঙ্খ সাঁতরা বলেন, ‘‘ঘরের সংখ্যা দ্বিগুণ করার আর্জি জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে।’’ জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রস্তাব রাজ্য দফতরে পাঠানো হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement