এখনও জমেনি কেনাকাটা, দাবি বিক্রেতাদের। নিজস্ব চিত্র
অন্য বার ভিড় ঠেলে এগোনো মুশকিল হয়ে যায় ক্রেতাদের পক্ষে। বাজার করতে আসা লোকজন এ বারও রয়েছে, তবে যাতায়াতে অসুবিধা হচ্ছে না মামরা বাজারে। একই রকম পরিস্থিতি দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজার বা স্টেশন বাজার এলাকাতেও।
শহরের এই বাজারগুলি ঘুরে দেখা গিয়েছে, বড় দোকানে তুলনায় ক্রেতাদের আনাগোনা রয়েছে। তবে ছোট-মাঝারি দোকানে ভিড় তেমন নেই। বেনাচিতি বাজারের বস্ত্র ব্যবসায়ী পবন চৌধুরী বলেন, ‘‘পুজোর দু’সপ্তাহ বাকি। অন্য বার নতুন করে জিনিস আনতে হয়। এ বার কিন্তু এখনও কেনাকাটার হিড়িক তেমন শুরু হয়নি।’’ দুর্গাপুর স্টেশন বাজারের খুচরো বিক্রেতা সদানন্দ সাউ বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত যাঁরা বাজার করতে আসছেন তাঁদের অধিকাংশই স্বচ্ছল পরিবারের। তাঁরা সাধারণত বড় দোকানেই কেনাকাটা করেন। যাঁরা আমাদের মতো দোকানে কেনাকাটা করেন, এখনও সে ভাবে বাজারে আসছেন না।’’
কেন এই পরিস্থিতি? বিক্রেতাদের অনেকের মতে, বহু ক্রেতাই এখন নানা রকম ছাড়ের লোভে এবং সময় বাঁচাতে অনলাইনে কেনাকাটা সেরে নেন। ফলে, দোকানে এসে কেনাকাটা করার মতো ক্রেতা কিছুটা কমছে। আবার অনেকে আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা রকম সংশয়ের খবরে কেনাকাটা করা নিয়ে দোটানায় পড়েছেন। পুজোর বাজার করতে বেরোলেও অন্য বারের মতো হাত খুলে খরচ করছেন না। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থায় এখনও বোনাসের টাকা কর্মীরা হাতে পাননি। তা পেলেই শেষ মুহূর্তে বাজারের মোড় ঘুরে যাবে বলে আশায় রয়েছেন ব্যবসায়ীদের অনেকে।
অনলাইনে কেনাকাটায় ঝোঁক বেড়েছে, সে কথা মানছেন অনেক ক্রেতাও। কলেজ পড়ুয়া অপরূপা হালদারের কথায়, ‘‘সারা বছর ধরেই টুকটাক কেনাকাটা করি। পুজোর সময়ে অনলাইনে কেনাকাটায় ভাল ‘অফার’ থাকে। তাই তাতেই বাজার সেরে নিচ্ছি।’’ বধূ অনিতা রায় জানান, বাড়ির ছোটদের জন্য কেনাকাটা অনলাইনে করলেও নিজের জন্য শাড়ি বাজার ঘুরে বেছে কিনবেন। তিনি বলেন, ‘‘বাচ্চাদের নিয়ে বাজার করতে গেলে সমস্যা হয়। পছন্দমতো অনলাইনে ‘অর্ডার’ করে দেওয়া ভাল।’’
শুধু কেনাকাটার ধরনে পরিবর্তন নয়, পুজোর বাজারের এই অবস্থার জন্য পকেটে টানকেও দায়ী করছেন অনেকে। দুর্গাপুরের ব্যবসায়ী দীপক পালের কথায়, ‘‘কয়েক মাস ধরেই বাজারের অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। রোজগার তলানিতে। তাই এ বার পুজোর বাজেটে কিছুটা কাটছাঁট করতেই হয়েছে। বাদ পড়েছে বেড়াতে যাওয়ায় পরিকল্পনাও।’’ বেসরকারি এক কারখানার কর্মী রামানুজ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী অরুণা চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানান, বোনাসের টাকা হাতে না পেলে কোনও বারই তাঁরা পুজোর বাজার করেন না। হাতে এখনও সময় আছে। বোনাসের টাকাটা পেলেই হইহই করে বাজার করতে বেরিয়ে পড়বেন, জানাচ্ছেন অরুণাদেবীর মতো অনেকেই।