মুখোমুখি। জেলা পরিষদ অভিযান কর্মসূচির মাঝে। ছবি: উদিত সিংহ
এ যেন যুদ্ধক্ষেত্র!
শুক্রবার দুপুরে বর্ধমান শহরের জিটি রোডের বীরহাটা থেকে পুরসভা মোড় পর্যন্ত রাস্তা পুলিশের দখলে ছিল। থমকে ছিল যান চলাচল। ব্যারিকেড করা হয়েছিল। ব্যারিকেডের আর এক পারে ছিলেন এসএফআই ও ডিওয়াইএফের প্রায় দু’হাজার নেতা-কর্মী। তবে প্রস্তুতি থাকলেও ‘যুদ্ধ’ বাধেনি। নির্বিঘ্নেই মেটে এসএফআই ও ডিওয়াইএফের পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ অভিযান।
গত অক্টোবরে সিপিএমের আইন অমান্য আন্দোলনের পরে কার্জন গেট চত্বর লন্ডভন্ড হওয়ার যে ছবি মিলেছিল, এ বার জল যাতে সে দিকে না গড়ায় তা নিয়ে সতর্ক ছিল পুলিশ। রাস্তার ওই অংশের বেশির ভাগ দোকান বন্ধ ছিল। টাউন সার্ভিস বাস চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। টোটো বা অন্য যানবাহনেও নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ দিন দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
বর্ধমান সদরের দুই মহকুমার সব থানার ওসিরা তো বটেই, কাটোয়া-কালনা মহকুমার পুলিশ আধিকারিকেরাও এ দিন হাজির ছিলেন। স্টেশন থেকে কার্জন গেট যাওয়ার রাস্তায় পার্কাস রোড থেকে বাদামতলা পর্যন্ত তিন জায়গায় ব্যারিকেড করা হয়। বেলা ৩টে ১০ নাগাদ স্টেশন থেকে এসএফআই ও ডিওয়াইএফের মিছিল বার হয়। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন ডিওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, এসএফআইয়ের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দীপ্সিতা ধর। পর পর দু’টি ব্যারিকেড ভাঙার পরে তৃতীয় ব্যারিকেড ভাঙতে গেলে পুলিশ আটকে দেয় তাঁদের। ততক্ষণে রাস্তার দু’ধারের ভবনগুলির ছাদে লোক জমে যায়। দুই সংগঠনের কর্মীরাও রাস্তায় বসে পড়েন।
মীনাক্ষী বলেন, ‘‘এত পুলিশ, এত ব্যারিকেড কিসের জন্য? আমরা তো কাউকে মারতে আসিনি, ধরতেও আসিনি। এটা স্রেফ ট্রেলার। আমরা ব্যারিকেড ভাঙতেও জানি, গড়তেও জানি।’’ তিনি বলেন, ‘‘বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরে বা পথে আমাদের কর্মীরা আক্রান্ত হতে পারেন। আমরা বিজেপি, তৃণমূল চিনব না। থানাকে দেখে নেব।’’ দীপ্সিতা বলেন, ‘‘ব্যারিকেডের ও পারে যত পুলিশ ছিল, তার তিন গুণ লোক আমাদের ছিল। আমরা চাইলে ব্যারিকেড ভাঙতে পারতাম। কিন্তু শৃঙ্খলা মানি বলে সে দিকে যাইনি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূলের নিচু স্তরের নেতারা ভয় দেখচ্ছেন। তাঁদের বলি, অনুব্রত মণ্ডলের পরিবার জেলে রয়েছেন। আরও অনেকে জেলে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না।’’ যদিও জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি রাসবিহারী হালদারের দাবি, ‘‘মানুষ ৩৪ বছরে ওঁদের রূপ দেখে নিয়েছেন। তাঁরা জানেন কারা পাশে আছে। এ সব করে বা বলে কোনও লাভ হবে না।’’
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৩১ অক্টোবর সিপিএমের আইন অমান্য আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কার্জন গেটে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এর পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেই কারণে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। পুলিশ সুপার (পূর্ব বর্ধমান) কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘কোনও রকম গন্ডগোল দেখলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হত।’’